‘বাংলার মন্ডা-মিঠাই খেতে এসে হিন্দি বলয়ের মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তিশগড়-সহ ৫ রাজ্যে করুণ পরিণতি হয়েছে বিজেপির’। বুধবার ছাতনা বাইপাস মোড়ের জনসভা থেকে বিজেপিকে এমন ব্যাঙ্গাত্মক ভাষাতেই কটাক্ষ করলেন তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি ও সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সরাসরি গেরুয়া শিবিরের দিকে আঙুল তুলে বলেন বিজেপি দেশ জুড়ে বিভাজনের রাজনীতি করছে।
গতকাল অভিষেকের জনসভা ছিল ছাতনার বামনকুলি ময়দানে। সভায় তিনি ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী শ্যামল সাঁতরা, বাঁকুড়া জেলা তৃণমূল সভাপতি অরূপ খাঁ, সাংসদ সৌমিত্র খাঁ, তালডাংরার বিধায়ক সমীর চক্রবর্তী-সহ দলের অন্যান্য বিধায়ক ও জেলার নেতারা। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সভা যখন প্রশ্নের মুখে, তখনও জনসভা করার বিষয়ে বদ্ধপরিকর ছিলেন অভিষেক।
শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী এবং বিজেপিকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘ভারতবর্ষ দু’বার লুঠ হয়েছে। একবার লুঠ করেছিল ইংরেজ আর দ্বিতীয়বার লুট হল মোদী সরকারের আমলে। দেশকে বাঁচাতে ইংরেজদের মতো বিজেপিকেও হঠাতেই হবে।’ তাঁর চ্যালেঞ্জ, আমরা এ রাজ্যে ৩৪ বছরের জগদ্দল পাথর সিপিএমকে হটিয়েছি। আমরাই পারব বিজেপিকে দেশ থেকে হঠাতে।
অভিষেক স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ‘যতগুলি প্রতিশ্রুতি দিয়ে কেন্দ্রে ক্ষমতায় এসেছিল মোদী সরকার, তার একটাও পূরণ করতে পারেননি তারা। কিন্তু নির্বাচনের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতগুলি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন।’ তিনি বিজেপির দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলি তুলে ধরে বলেন, ‘সবক্ষেত্রেই যে তারা ব্যর্থ তা দেশের মানুষকে আর নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। ওরা হিন্দুধর্মের নামে রাজনীতি করে। সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় ও গুজরাটে মুখ থুবড়ে পড়েছে। যেখানে ৯৫-৯৬ শতাংশ মানুষই হিন্দু।’
এরপরই তাঁর প্রশ্ন, ‘ওরা কথায় কথায় হিন্দু হিন্দু করে। কিন্তু হিন্দুদের জন্য কি একটা কাজও তারা করেছে? কেউ কি একটা উদাহরণ দিতে পারবেন? বিজেপির নেতারা হয়ত বলতে পারেন, তাঁরা গঙ্গা পরিষ্কার করেছেন। কিন্তু বাস্তবে যা হয়েছে, তা একটা মস্ত বড় দুর্নীতি। প্রায় ২০০০ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। মোদী শুধু প্রচারের জন্যই খরচ করেছেন ৫২৭৮ কোটি টাকা। মূর্তি বানাতে খরচ করেছেন প্রায় ৩০০০ কোটি টাকা। কিন্তু সাধারণ মানুষের জন্য কাজ হয়নি।’
কেন্দ্রীয় প্রকল্প এবং রথযাত্রা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে অভিষেকের কটাক্ষ, ‘টাকার অভাব দেখিয়ে বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু রথযাত্রার নামে দিল্লী থেকে একটি বিলাসবহুল বাস আনা হয়েছে! যাতে ফুর্তি করা যাবে। ছাইপাঁশ খাওয়া যাবে। মলমূত্র ত্যাগ করা যাবে। এ কেমন রথ? আমরা জগন্নাথদেব ও অন্যান্য দেবদেবীদের রথের কথা জানি। সেই রথে থাকেন দেবদেবীরা। আর এই রথে থাকবেন অসুররা। বিজেপি নেতারা খালি ভাঁওতাবাজি আর প্রতারণাই করতে পারে।’
তৃণমূলের আসন্ন ব্রিগেড সমাবেশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শেষবার ব্রিগেডের জনসভা হয়েছিল ২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি। আগামী ১৯ জানুয়ারি এবারের ব্রিগেডের সভার ডাক দেওয়া হয়েছে। তবে অন্য সব ব্রিগেডের সঙ্গে এবারের ব্রিগেডের তুলনা চলে না। কেন না, এবারের ব্রিগেডে শরদ পাওয়ার, স্ট্যালিন, অখিলেশ যাদব, অরবিন্দ কেজরিওয়ালের মতো দেশের বিজেপি বিরোধী দলগুলির শীর্ষনেতা ও মুখ্যমন্ত্রীরা উপস্থিত থাকবেন এবং এই ব্রিগেড থেকেই মোদী হঠাও ডাক দেওয়া হবে।’ এরপরই উপস্থিত জনতা ও দলীয় কর্মীদের উদ্দেশ্যে অভিষেকের স্লোগান, ‘দড়ি ধরে মারো টান, মোদী হবে খান খান।’তৎক্ষণাৎ উচ্ছ্বসিত জনতাও গলা মেলান সর্বভারতীয় যুব সভাপতির সঙ্গে। হাততালিতে ফেটে পড়ে সভাস্থল।