গত দু’দিনের টানা বৃষ্টিতে বেশ ভালো রকম ক্ষতিগ্রস্ত হল রবি ফসল। শুধু রবি ফসল নয়, পৌষ মাসের শুরুতেই এই বৃষ্টি আমন চাষেও প্রভাব ফেলেছে কারণ এই সময়ের বৃষ্টিতে আমন ধানের ফলন ভালো হয় না। দুশ্চিন্তায় পড়েছেন আমচাষিরাও কারণ এমন আবহাওয়া চলতে থাকলে আমগাছে মুকুল আসবে কম, পাতা আসবে বেশি এবং উপদ্রব বাড়বে ছত্রাকের যার ফলে আমের ফলনও কমবে বলে মনে করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে হাত গুটিয়ে বসে নেই কৃষি দফতরও, গত দুদিনের বৃষ্টি কৃষিতে কী প্রভাব ফেলেছে, সে সম্পর্কে জেলার কৃষি আধিকারিকদের কাছে বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়েছে রাজ্যের কৃষি দফতর।
কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার জানিয়েছেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কৃষকদের পাশে সব সময় আছেন। মাঠে এখনও ধান রয়েছে। কৃষি আধিকারিকদের বলা হয়েছে দ্রুত রিপোর্ট দেওয়ার জন্য। রাজ্য সরকার সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে।’
শস্যগোলা পূর্ব বর্ধমানে এই দুদিনের বৃষ্টি সবজি চাষের পাশাপাশি আলু চাষেও ব্যাপক ক্ষতি করেছে। জেলায় ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে আলু হয়। এখন সবে আলুর গাছ বের হতে শুরু করেছে। বৃষ্টিতে সেই সব গাছে ছত্রাকের প্রকোপের আশঙ্কা। আর যে সমস্ত আলুর জমিতে গাছ বেরোয়নি, সেইসব জমির আলু পচে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষকদের কথায়, ‘এমনিতে বছর তিনেক ধরে আলুর দর মিলছে না। আলুর গাছ বড় হলে ছত্রাকের সংক্রমণ রুখতে কীটনাশক ছড়াতে হয়। এখন থেকে কীটনাশক ছড়ালে চাষের খরচ বাড়বে।’আলু ছাড়াও যে সমস্ত নিচু জমিতে সবজি চাষ হয়েছে, সেখানে জল জমলে সবজির ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা।
পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনি, গরবেতা, ধেড়ুয়া, চাঁদড়া, গোয়ালতোড় এলাকায় মাঠে মাঠে আলু চাষ। মেঘলা আকাশ, স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়া, এর ওপর কখনও হালকা, কখনও ভারী বৃষ্টির জেরে আলু চাষে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঘাটাল, দাসপুর, পিংলা, সবং, নারায়ণগড়ের অনেক এলাকায় বহু কৃষকেরা এখনও ধান ঝেড়ে ঘরে তুলতে পারেননি। খড়-সহ ধান গাদা দিয়ে রাখা হয়েছিল। ফেতাই–এর বৃষ্টির জেরে সব ভিজে একশা। মাথায় হাত কৃষকদের। ধান, আলু ও সর্ষে চাষে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বাঁকুড়ায়।
এই আবহাওয়া আমের ফলনেও প্রভাব ফেলতে চলছে বলে মনে করছে উদ্যানপালন দফতর। কারণ ঝিরঝির বৃষ্টিতে আমের মুকুল আসবে কম। পাতা আসবে বেশি। গাছে ছত্রাক জাতীয় রোগ সৃষ্টি হতে পারে। আর এতেই দুশ্চিন্তায় পড়েছেন মালদার আমচাষিরা। তাঁদের বক্তব্য, এখন থেকে আম গাছে মুকুল তৈরির পরিস্থিতি হতে শুরু করে। কিন্তু এই মেঘলা আবহাওয়ায় হঠাৎ করে গাছের মুকুল তৈরিতে চরম সমস্যা দেখা দেবে।
সব মিলিয়ে এই দু’দিনের বৃষ্টি রীতিমত চিন্তায় ফেলেছে চাষিদেরকে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে সমস্ত রকম সহায়তার কথা ঘোষণা করা হয়েছে ইতিমধ্যেই।