বাম সরকারের রেখে যাওয়া ঋণের বোঝা সত্বেও ক্ষমতায় এসেই রাজ্যের সাধারণ মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসা ও যাবতীয় ওষুধ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যবাসীর কাছে অঙ্গীকারবদ্ধ মমতা যে ইতিমধ্যেই তাঁর কথা রেখেছেন তা জানতে আর বাকি নেই কারও। সে কথা বলছে পরিসংখ্যানও। জানা গেছে, শেষ আর্থিক বছরে মমতার সরকার গ্রামের স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে শুরু করে শহরের বড় বড় মেডিক্যাল কলেজ পর্যন্ত বিস্তৃত ত্রিস্তরীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় প্রায় ১২০০ কোটি টাকার ওষুধ ও যন্ত্রপাতি দিয়েছে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। যা রাজ্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ইতিহাসে সর্বকালীন রেকর্ড!
সোমবার স্বাস্থ্য দফতর এক শীর্ষ সূত্রে জানা গেছে, বলছে, ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষের ৩১ মার্চ পর্যন্ত সরকার শুধু এক বছরেই ফ্রি মেডিসিন বাবদ রাজ্য খরচ করেছে প্রায় ৬৫০ কোটি টাকা। কম-মাঝারি-বেশি দামি চিকিৎসার যন্ত্রবাবদ খরচ করা হয়েছে ৫০০ কোটি টাকারও বেশি! দুইয়ে মিলিয়ে শুধু বিনামূল্যের ওষুধ ও যন্ত্রবাবদই ১১৫০ কোটি টাকারও বেশি খরচ করা হয়েছে গত অর্থবর্ষে।
উল্লেখ্য, বাম জমানার শেষ লগ্নে যখন স্বাস্থ্যখাতে ড্যামেজ কন্ট্রোলে তখনকার সরকার বাজেটবরাদ্দ কিছুটা হলেও বাড়াতে শুরু করেছে, সে সময়েও ফ্রি ওষুধ ও যন্ত্র বাবদ মোট সরকারি খরচ মমতার জমানার ধারেকাছেও ছিল না। ২০১০-১১ অর্থবর্ষে বিনামূল্যে ওষুধ খাতে ১৫০ কোটি এবং বিনামূল্যের যন্ত্রপাতি খাতে ১০০ কোটি, দুয়ে মিলিয়ে ২৫০ কোটি টাকা খরচ করেছিল বাম সরকার। সেদিক থেকে বলতে গেলে সিপিএম জমানার তুলনায় সাধারণ মানুষের কাছে বিনা পয়সার ওষুধ ও যন্ত্র তুলে দিতে সাড়ে চার গুণের বেশি খরচ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
দামি অর্থোপেডিক ইমপ্ল্যান্ট, হার্টের রোগীদের জন্য ক্যাথিটার, বেলুন, স্টেন্ট, পেসমেকার সহ অজস্র ধরনের চিকিৎসা যন্ত্রপাতি তো আছেই, ক্যান্সার, হেমাটোলজি, প্রতিস্থাপন সহ প্রায় সব ধরনের চিকিৎসায় প্রায় সব ধরনের ওষুধই ফ্রিতে দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। যতদিন যাচ্ছে সরকারি হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা উত্তরোত্তর বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, বিনামূল্যে ওষুধ ও যন্ত্রপাতির চাহিদাও লাফিয়ে বাড়ছে।
সূত্রের খবর, যত দিন গড়িয়েছে বিনামূল্যে ওষুধ ও যন্ত্রপাতি খাতে খরচ বাড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী। বিনামূল্যে চিকিৎসা চালুর বছর অর্থাৎ ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষে রাজ্যের হাসপাতালে হাসপাতালগুলিতে বিনামূল্যে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ দিতে রাজ্য খরচ করেছিল ৩৫০ কোটি টাকা। বিনা পয়সার যন্ত্রপাতি বাবদ খরচ করা হয় আরও ৩০০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে এই প্রকল্পে ৬৫০ কোটি টাকা খরচ করা হয় শুধু ওষুধ ও যন্ত্রবাবদই।
আবার ঠিক তার পরের আর্থিক বছরেই (২০১৬-১৭) ওষুধ খাতে খরচ অনেকটাই বাড়ে। হয় ৪৯০ কোটি টাকা। বিনামূল্যে যন্ত্রপাতি মিলিয়ে সেই খরচ বেড়ে হয় ৬৮০ কোটি। গত আর্থিক বছরে সমস্ত হিসেব-নিকেশ ছাপিয়ে দেড় গুণের বেশি খরচ বেড়ে যায় ওষুধ ও চিকিৎসার যন্ত্র দিতে। খরচ ছাড়িয়ে যায় ১১৫০ কোটি। দফতরের ওই শীর্ষ সূত্র জানিয়েছে, এই আর্থিক বছরের শেষে শুধু ফ্রি ওষুধ ও যন্ত্রপাতিখাতে খরচ ১৫০০ কোটি টাকার ছুঁয়ে ফেললেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কারণ রাজ্যের মতো রাজ্যবাসীর স্বাস্থ্য নিয়েও সদাই ভাবিত মুখ্যমন্ত্রী।