বোমা-বন্দুকের শব্দেই রবিবার ঘুম ভাঙল ময়নাবাসীর। এলাকা দখল করতে আসা বিজেপির বহিরাগত দুষ্কৃতীদের তান্ডবে গতকাল রণক্ষেত্রের চেহারা নিল ময়নার বাকচা। সঙ্ঘর্ষের সময় বোমা-গুলিতে জখম হয়েছেন তৃণমূলের ৯ কর্মী-সমর্থক। সেই সঙ্গে হামলাকারীদের রোষে পুড়ে ছাই হয়েছে ৭ তৃণমূল কর্মীর বাইকও। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েক রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস ও রবার বুলেট ছোড়ে পুলিশ।
রবিবার সকালে এলাকার এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র উত্তেজনা ছড়ায়। সারাদিনই উত্তপ্ত ছিল বাকচা। এর পাশাপাশি ওদিন সকালেই পুকুর থেকে উদ্ধার হয় শনিবার রাত থেকে নিখোঁজ এলাকায় তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত শঙ্করের দেহ। অন্যদিকে, এলাকায় বোমাবাজিতে সঞ্জয় মণ্ডল নামে এক তৃণমূল কর্মীও আহত হন। হাসপাতালে জখম অবস্থায় তাঁর অভিযোগ, ‘বিজেপির লোক আমাকে বাড়ির বাইরে নিয়ে যায়। ওরা বোমা ছুঁড়লে হাতে লাগে।’
যেহেতু শুধুমাত্র তৃণমূল কর্মীদেরই নিশানা করা হয়েছে, তাই গোটা ঘটনায় অভিযোগের তির বিজেপির দিকেই। তৃণমূলের দাবি, বিগত পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর থেকেই বাকচা এলাকা দখলে মরিয়া হয়ে উঠেছে গেরুয়া শিবির। রবিবার কাকভোরে ফের বহিরাগতদের আনিয়ে তারা গোলমাল পাকিয়েছে বলে দাবি করেন তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সুব্রত মালাকার। তাঁর অভিযোগ, ‘বিজেপি বহিরাগত দুষ্কৃতীদের এনে আমাদের কর্মীদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। ওরা আমাদের ৭ জন কর্মীর বাইক পুড়িয়ে দিয়েছে। ওদের ছোড়া বোমায় আমাদের ৩ জন কর্মী জখম হয়েছেন।’ একইসঙ্গে তিনি জানান, ‘বিজেপিই শঙ্করকে মেরেছে।’
ঘটনায় ক্ষুব্ধ এবং আতঙ্কিত এলাকাবাসীরা জানিয়েছেন, রবিবার ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ কালো পোশাক পরা প্রায় ২০ সদস্যের মাস্কেট বাহিনী বাকচা পঞ্চায়েতের গোড়ামাহাল গ্রামে বোমাবাজি করতে করতে ঢোকে। ঘটনায় দুই গ্রামবাসীও জখম হন। আতঙ্ক কাটিয়ে গ্রামবাসীর শঙ্খধ্বনি করে সকলকে সতর্ক করতে শুরু করেন। দুষ্কৃতীরা স্কুলের মধ্যে থাকা পুলিশ ক্যাম্পেও বোমা ও ইট বৃষ্টি শুরু করে। সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা তৃণমূল কর্মীদের ৭টি বাইকেও আগুন লাগিয়ে দেয় তারা। পুলিশ যাতে ঘটনাস্থলে ঢুকতে না পারে, সে জন্য বাকচা, গোড়ামাহাল ও আড়ং কিয়ারাণা গ্রামে ঢোকার প্রায় সব রাস্তা বড় গাছের গুঁড়ি, ইট, চেলা কাঠ, জ্বালানি, বেঞ্চ, জঙ্গলের কাঁটার ঝোপ দিয়ে আটকে দেয় তারা। এমনকি ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে পৌঁছলে দুষ্কৃতীরা ওসির গাড়ি লক্ষ্য করে শাবলও ছোড়ে।
তমলুকের এসডিপিও সুরজিৎ মণ্ডল বলেন, ‘বাকচায় রাজনৈতিক সঙ্ঘর্ষের ঘটনা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। কাঠের গুঁড়ি-সহ অন্যান্য সামগ্রী দিয়ে আটকে দেওয়া রাস্তাও পরিষ্কার করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।’