রাফাল-রায়ে সুপ্রিম কোর্ট মোদী সরকারকে ক্লিনচিট দিলেও, সেই ইস্যুতে এখনই ইতি টানতে চায় না কংগ্রেস। এবার রাফাল নিয়ে মোদী সরকারের উপরে আরও চাপ বাড়ানোর কৌশল নিল বিরোধীরা৷ আজ, সোমবার সংসদে অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপালের বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের প্রস্তাব আনতে চলেছে তারা। কংগ্রেসের দাবি, সরকারের অনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে অবিলম্বে রাফাল রায় প্রত্যাহার করুক সুপ্রিম কোর্ট৷
রবিবার কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মা বলেন, ‘বিজেপির উচিত প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি কুম্ভে গিয়ে সদলবলে প্রায়শ্চিত্ত করা৷ সরকার সুপ্রিম কোর্টে ভুল তথ্য দিয়েছে৷ তারা প্রথমে সুপ্রিম কোর্টকে বলে যে, রাফাল নিয়ে দামের পুরো তথ্য সিএজি-কে দেওয়া হয়েছে এবং সিএজি তা বিশ্লেষণ করে ঠিক বলেছে৷ এর পরে ওই রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে পিএসি (পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি)-কে৷ পুরোটাই ভ্রান্ত৷ না সিএজিকে কোনও রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে, না তা পিএসির কাছে পাঠানো হয়েছে। সরকার কি প্রমাণ করতে চাইছে যে, দেশের প্রধান বিচারপতি ও তাঁর সহযোগী বিচারপতিরা ইংরেজি ব্যাকরণ বোঝেন না?’
সরকারের তরফে শীর্ষ আদালতে যে সংশোধনী দেওয়া হয়েছিল, তাকেই এ দিন হাতিয়ার করা হয়েছে৷ আনন্দের মতে, ‘প্রথমে সরকার যা বলেছে এবং পরে আদালতে সরকারের তরফে যে সংশোধনী আবেদনপত্র দেওয়া হয়েছে, তাতে সরকারের দ্বিচারিতা স্পষ্ট৷ রাফাল রায়ের ত্রুটির পুরো বিষয়টি আদালতের উপরে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে৷ একই ভাবে সরকার সংসদেরও বিশ্বাসভঙ্গ করেছে, কারণ সংসদের কোনও কমিটির কাছেই রাফাল নিয়ে রিপোর্ট আসেনি৷ এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ করুক সুপ্রিম কোর্ট৷’
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন বিজেপি নেতা ও সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামীও৷ তিনি বলেন, ‘সংবাদমাধ্যম বলছে যে অ্যাটর্নি জেনারেল এই হলফনামা তৈরি করেননি৷ তা হলে কে তা তৈরি করল, তা প্রধানমন্ত্রীর খতিয়ে দেখা উচিত, কারণ বিষয়টির সঙ্গে তাঁর সম্মান জড়িত৷ প্রশ্ন উঠছে যে, আমরা কি ইংরেজিতে যথাযথ হলফনামা তৈরি করতে পারি না? হিন্দিতেও তো হলফনামা তৈরি করা যেত৷’
চাপের মুখে পড়ে অবস্থা সামাল দিতে নেমেছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। তিনি বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের রায়ে রাফাল চুক্তির বৈধতা প্রমাণিত। কোনও রাজনৈতিক দল কোর্টের রায়ের বিরোধিতা করে এমন কোনও তথ্য পেতে পারে না।’ সিএজি এবং পিএসি প্রসঙ্গে জেটলির দাবি, সমস্ত তথ্য সঠিক পেশ করা হয়েছে। অন্যদিকে রায়বরেলিতে রাফাল নিয়ে সাফাই গেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। সেনার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, ‘কার্গিল সংঘর্ষের পরই আধুনিক যুদ্ধবিমানের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়েছিল।’
অন্যদিকে, আজ তৃণমূল সাংসদরা সংসদে কৃষকদের দুর্দশার ইস্যুতে সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। শীতকালীন অধিবেশনে জোড়া চাপের মুখে পড়তে চলেছে মোদি সরকার। কারণ, শুক্রবারের মতোই তিনি বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের রায়ে রাফাল চুক্তির বৈধতা প্রমাণিত। কোনও রাজনৈতিক দল কোর্টের রায়ের বিরোধিতা করে এমন কোনও তথ্য পেতে পারে না।’ সিএজি এবং পিএসি প্রসঙ্গে জেটলির যুক্তি, সমস্ত তথ্য সঠিক পেশ করা হয়েছে।
অন্যদিকে, আজ তৃণমূল সাংসদরা সংসদে কৃষকদের দুর্দশার ইস্যুতে সরকারের বিরুদ্ধে সরব। রাফাল ইস্যুতে প্রিভিলেজ মোশন এনে কংগ্রেস যেমন কেন্দ্রীয় সরকারকে চেপে ধরবে বলে ঠিক করেছে, তেমনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর দলকে নির্দেশ দিয়েছেন কৃষি এবং কৃষক ইস্যুতে সংসদে লাগাতার মোদি সরকারকে কোণঠাসা করতে হবে। সেই মতোই আজ সকালে সংসদভবন চত্বরে গান্ধীমূর্তির পাদদেশে সকল সাংসদ ধর্না প্রদর্শন করছেন। একইসঙ্গে লোকসভা এবং রাজ্যসভা, সংসদের দুই কক্ষেই আলোচনা চেয়ে নোটিস দিচ্ছেন তারা।
তৃণমূল নেত্রীর দাবি, কৃষি এবং কৃষক ইস্যুতে প্রতিশ্রুতি পালনে নরেন্দ্র মোদী ফেল। ক্ষমতার কুর্সিতে মোদি সরকারের ৫ বছর হয়ে গেলেও, এখনও গোটা দেশে কৃষকের উপার্জন দ্বিগুণ হওয়ার মতো পরিস্থিতিই তৈরি হয়নি। এখনও বিভিন্ন রাজ্যে কৃষক আত্মহত্যা বজায় রয়েছে। কৃষকদের অভাবী বিক্রিও করতে হচ্ছে। তাই কৃষি এবং কৃষক ইস্যুতে সংসদের দুই কক্ষেই সরব হয়েছে তাঁর দল তৃণমূল। একদিকে রাফাল, অন্যদিকে কৃষক সমস্যা, এই শীতকালীন অধিবেশনে জোড়া চাপের মুখে পড়তে চলেছে মোদী সরকার।