রাজ্যের ছাত্র ছাত্রীরা নিজেদের সঙ্গীত প্রতিভা বিকাশের যথাযথ সুযোগ পায় তার উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে সঙ্গীত মেলা। আলিপুরে উত্তীর্ণ মঞ্চে গতকালই এই মেলার উদ্বোধন করেছেন তিনি। সেই অনুষ্ঠানেই তিনি জানালেন আগামী বছর থেকে রাজ্যের প্রতিটি ব্লকে সঙ্গীত মেলার আয়োজন করবে রাজ্য সরকার।
বাংলা সঙ্গীত মেলা এবং বিশ্ববাংলা লোকসংস্কৃতি উৎসব- এই যুগ্ম উৎসবের সূচনা কাল একই সঙ্গে উত্তীর্ণ মঞ্চেই মমতার হাত ধরে হয়। রিমোট টিপে তিনি উদ্বোধন করেন বাংলা সঙ্গীত অ্যাকাডেমির মুক্তমঞ্চের। বাউল, ফকিরি, ঝুমুর, সাঁওতালি, ভাওয়াইয়া, রবীন্দ্রসঙ্গীত, আধুনিক ইত্যাদি বিভিন্ন গানের মিশেলে উত্তীর্ণ মঞ্চ হয়ে উঠেছিল সঙ্গীতের ‘মিলনমেলা’৷
স্বর্ণালী যুগের গায়িকা ‘গীতশ্রী’ সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, হৈমন্তী শুক্লা, শ্রাবণী সেন, রূপঙ্কর, রাঘব, মনোময়, শান, অরিজিৎ সিং- দর্শকাসনে কাল যেন বসেছিল চাঁদের হাট। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর মমতা বলেন, ‘সুর-সঙ্গীতের কোনও গণ্ডি নেই, নেই সীমাবদ্ধতা। বাংলা গানের রেশ ছড়িয়ে রয়েছে দেশ ছাড়িয়ে গোটা বিশ্বে।’ লোকসঙ্গীত শিল্পী গীতা চৌধুরী, ঝুমুরশিল্পী সরস্বতী দেবী, সাঁওতালি সঙ্গীতশিল্পী বিভা হাঁসদার মতো ১২ জন শিল্পীকে ‘সঙ্গীত সম্মান’প্রদান করেছেন মমতা। ‘সঙ্গীত মহাসম্মান’-এ ভূষিত করা হয়েছে শান, অরিজিৎ সিং, রূপঙ্কর, রাঘব আর মনোময়ের মতো ন’জন প্রথিতযশা শিল্পীকে। সম্মান প্রদান শেষে মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধে গিটার হাতে তুলে নিয়ে অরিজিৎ শুরু করেন কালজয়ী সেই গান— ওগো মায়াভরা চাঁদ, ওগো মায়াবিনী রাত৷ শুরু হওয়া মাত্রই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন গীতশ্রী। মঞ্চে বসেই গানের সঙ্গে তাল দিচ্ছিলেন তিনি। খোদ মমতার অনুরোধে রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘তোমার খোলা হাওয়া’ পরিবেশন করেন শান। এমনকী মমতার অনুরোধেই সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় গাইলেন তাঁর সেই বিখ্যাত গান ‘উজ্জ্বল এক ঝাঁক পায়রা’।
মমতার উদ্যোগেই লোকসঙ্গীত শিল্পীরাও অনুষ্ঠান করেন। তাঁদের মুখের সামনে মাইক ধরেন স্বয়ং তিনি নিজে। তাঁদের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, রাজ্যের প্রতিটি দফতরেই এই শিল্পীদের ব্যবহার করা হবে। বিভিন্ন বিজ্ঞাপনেও এনারা থাকবেন। বাংলার লোকপ্রসার প্রকল্পের সাফল্যের সূত্রেই এবারের সঙ্গীত মেলায় প্রায় প্রায় ৫ হাজার শিল্পী অংশ নিয়েছেন।
ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে থাকা লোকসঙ্গীত শিল্পীদের একসঙ্গে নিয়ে প্রায় হারিয়ে যাওয়া লোকগানকে ফিরিয়ে আনার ব্রত নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনিই শুরু করেছেন লোকপ্রসার প্রকল্প। এমনকি বাংলার নিজস্ব সঙ্গীতের অফুরান ভাণ্ডারের অধিকারীরা যাতে ভালো ভাবে জীবন যাপন করতে পারেন সেই দায়িত্বও নিয়েছেন। গোটা বাংলার প্রায় ২ লাখেরও বেশি লোকপ্রসার লোকশিল্পীকে পরিচয়পত্র দেওয়ার সঙ্গে প্রতিমাসে ১০০০ টাকা সাম্মানিক ভাতার বন্দোবস্তও হয়েছে তাঁরই হাত ধরে।