২০১৪ সাল থেকেই জাতীয় পরিবেশ আদালত মেঘালয়ের বেশ কিছু কয়লা খনিকে অবৈধ বলে ঘোষণা করেছিল কিন্তু তবুও সেখান থেকে কয়লা তোলা বন্ধ হয়নি। বৃহস্পতিবার সকালে এমনই এক অবৈধ খনিতে নেমেছিলেন ১৩ জন। খনিটির পাশেই ছিল নদী। তাঁরা ভেতরে যাওয়ার খানিকক্ষণের মধ্যেই জলে ভরে যায় খনির মুখ।অনুমান করা হচ্ছে, তাঁরা কেউই বেঁচে নেই।
ওই অবৈধ খাদানটি প্রায় ৩২০ফুট গভীর। দুর্ঘটনার সময় সকলেই অতটাই গভীরে ছিলেন। একজায়গায় কয়লার সিমের ওপরে গাঁইতি চালাতেই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে ছাদ। নদী থেকে বান এসে ভাসিয়ে দেয় খনি। এই পরিস্থিতিতে ১৩ জনের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা প্রায় নেই। শনিবারও অন্তত ১০০ জন ত্রাণকর্মী খনির মধ্যে ঢোকার চেষ্টা করছেন। তাঁদের মধ্যে আছেন ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স টিম, স্টেট ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স এবং সিভিল ডিফেন্স। খনির মধ্যে প্রায় ৭০ ফুট জল জমেছে। এক ডজন ত্রাণকর্মী পাম্প করে জল বার করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এনডিআরএফ ত্রাণকর্মীরা ডুবুরি নামিয়ে আটকে পড়াদের সন্ধান পেতে চেষ্টা করছেন। কিন্তু জলে মিশে আছে কাদা আর কয়লার গুঁড়ো। তাই বেশিদূর দেখা যাচ্ছে না। তাছাড়া খনির কোনও ম্যাপও নেই। ফলে ১৩ জন ঠিক কোথায় আটকে আছেন, সন্ধান পাওয়া দুঃসাধ্য হয়ে উঠছে। ইস্ট জয়ন্তিয়া হিলস পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে প্রথম জানা যায়, খনিতে কয়েকজন আটকে পড়েছেন। যতদূর জানা যায়, খনিটি পুরানো। বহুদিন আগেই পরিত্যক্ত। সপ্তাহখানেক আগে নতুন করে সেখান থেকে কয়লা তোলা শুরু হয়।
মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা জানিয়েছেন, ‘এখন ত্রাণকার্যের ওপরেই জোর দেওয়া হচ্ছে। আমরা জানি, ওখানে বেআইনিভাবে কয়লা তোলা হচ্ছিল। দোষীরা কেউ ছাড় পাবে না।’ খনির মালিক পলাতক। তার সন্ধানে চলছে তল্লাশি। খনিতে যারা আটকে রয়েছে, তাদের তিনজন মেঘালয়ের লুমথারি অঞ্চলের বাসিন্দা। বাকিরা এসেছিল ওয়েস্ট গারো হিলস এবং প্রতিবেশী রাজ্য অসম থেকে।
অনেক দূর থেকে কেউ যদি দেখে, তাহলে মনে হবে একের পর এক ইঁদুরের গর্ত ছড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু কাছে গেলে বোঝা যায়, সেগুলি ইঁদুরের গর্ত নয়। আসলে স্থানীয় গ্রামবাসীদের খোঁড়া গর্ত, যেখান দিয়ে ঢুকে গিয়ে তাঁরা অবৈধভাবে কয়লা খাদানে অংশ নেন। সেখান থেকেই তুলে আনেন কয়লা৷ সাধারণত ইঁদুরের গর্তের মত দেখতে এই খনি গুলিকে ‘র্যাট হোল খনি’ বলা হয়ে থাকে। এগুলি শুধু দুর্ঘটনা নয় প্রবল মাত্রায় পরিবেশ দূষণও ঘটায়। কয়েক বছর আগে এক সমীক্ষায় জানা গিয়েছিল, র্যাট হোল খনির আশপাশে সব ঝরণা ও নদীর জন বিষিয়ে গিয়েছে। জলের রং হয়ে গিয়েছে লালচে অথবা বাদামি। কয়েক বছর আগে গ্রিন ট্রাইব্যুনালও এই সব খনি নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল। তার পরেও লুকিয়ে চুরিয়ে ওইভাবে কয়লা তোলা হয়।
আর তার ফল এইভাবে জীবন দিয়ে মেটাতে হল ১৩ জনকে।