তাহলে কী দু’হাজার উনিশ, বিজেপি ফিনিশ? এবার এই প্রশ্নটা কিন্তু আরও জোরালো ভাবে উঠে এল গোটা দেশে। নরেন্দ্র মোদী যে অপ্রতিরোধ্য নয়, মোদী ম্যাজিকও যে ফ্লপ করতে পারে, ৫ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল যেন সেই ইঙ্গিতই দিল। রাজনৈতিক মহলের মতে, ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের আগে এই ৫ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন ছিল এক অর্থে সেমিফাইনালই। একইসঙ্গে মোদী-শাহ জুটির কাছে অগ্নি পরীক্ষা। কিন্তু এই পরীক্ষায় ডাহা ফেল মোদী-শাহ।
অন্যদিকে, ৫ রাজ্যেই বিজেপি মুখ থুবড়ে পড়ার ফলে রাতারাতি বদলে গেল দেশের রাজনৈতিক মানচিত্র। গোবলয়ের একটা বড় অংশের গেরুয়া রঙ মুছে হয়ে গেল সবুজ। এর পাশাপাশি বিরোধীদের মধ্যেও এই আত্মবিশ্বাস ফিরে এল যে, মোদী-শাহর বিজয়রথের ঘোড়া থামানো সম্ভব। শুধু তাই নয়, এখনকার পরিস্থিতিতে এবং এই সমীকরণে ভোট হলে দিল্লির মসনদ থেকে যে সহজেই পদ্ম উপড়ে ফেলা যাবে, তা নিয়েও আত্মবিশ্বাসী বিরোধী শিবির।
দিল্লীর রাজনীতিতে বরাবরই সবচেয়ে বড় ভূমিকা নেয় মধ্য ভারত তথা হিন্দি বলয় বা গোবলয়। উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, পঞ্জাব, হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশ, জম্মু কাশ্মীর, গুজরাত এবং দিল্লিই মূলত নিয়ন্ত্রণ করে রাজধানীর মসনদ। লোকসভার নির্বাচিত আসন সংখ্যা ৫৪৩। আর তার অর্ধেকেরও বেশি অর্থাৎ ম্যাজিক ফিগারের চেয়েও বেশি ২৭৩টি আসনই রয়েছে এই বলয়ে। ফলে এই বিস্তীর্ণ এলাকা হাতে থাকলেই দিল্লির মসনদ যে পাক্কা, সেটা নিশ্চিত। বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএর হাতে এই মুহূর্তে যে ২২৬ আসন রয়েছে তার পুরোটাই প্রায় এই বলয়ের অন্তর্ভুক্ত।
তবে এবার সেই বলয়েই থাবা বসিয়েছে কংগ্রেস তথা ঘোষিত বিজেপি বিরোধীরা। গোরক্ষপুর-ফুলপুরের উপনির্বাচনে উত্তরপ্রদেশের দুই মেরুতে থাকা দুই দল যে জোট করে বিজেপিকে হারিয়েছিল, কংগ্রেসকে সমর্থন দিয়ে তারা আবারও ইঙ্গিত দিল, লোকসভা ভোটে কংগ্রেস-এসপি-বিএসপি মহাজোটের। এর সঙ্গে তিন রাজ্যের বিধানসভা ভোটের ফলের সমীকরণে লোকসভা ভোট হলে বিজেপি ৮০ থেকে ১০০টির বেশি আসন খোয়াতে পারে বলে ধারণা রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের।
বর্তমানে লোকসভায় বিরোধী শিবিরের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেসই। মমতা এই মুহূর্তে দেশের বিজেপি বিরোধী জোটের মধ্যমণিও বটে। হাজারও মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আর ভাগাভাগির রাজনীতি করে বাংলায় আগের বার মাত্র দু’টি আসন পেলেও, এবার যে সেই দুটি আসনই হারাতে হবে তাদের, তা ভাল মতোই জানে গেরুয়া শিবির। কারণ তৃণমূলের উন্নয়নের জোয়ারে বাংলার মাটিতে মাথা তুলে দাঁড়াতেই পারেনি সাম্প্রদায়িকতার পদ্ম।
পড়ে রইল শুধু উত্তর-পূর্ব ভারত। সেখানে আসাম, সিকিম, মণিপুর ও ত্রিপুরা বিজেপির দখলে রয়েছে ঠিকই, কিন্তু এনআরসি ইস্যুতে ইতিমধ্যেই ক্ষোভে ফুঁসছে আসাম। ফলে লোকসভা ভোটে বিজেপির বিরুদ্ধে নিজেদের ক্ষোভ উগড়ে দিতে আসামবাসী, এমনটাই মনে করছে রাজনীতির কারবারিরা। তবে এবারের নির্বাচনে কংগ্রেসের হাতে থাকা মিজোরাম ছিনিয়ে নিয়েছে এনডিএর শরিক দল এমএনএফ। তাই বলার মতো বিজেপির এখন হাতে শুধু এইটুকুই। কিন্তু শুধুমাত্র উত্তর-পূর্বে ভর করে যে দিল্লীর মসনদ ধরে রাখা অসম্ভব, মোদি-শাহ জুটি তা ভাল করেই জানেন। সবমিলিয়ে বিজেপির অশ্বেমেধের ঘোড়া সেমিফাইনালেই যেভাবে থমকে গেল, তা দেখে ভালমতোই আন্দাজ করা যাচ্ছে যে ফাইনালে অর্থাৎ লোকসভা ভোটেই একেবারে মুখ থুবড়ে পড়বে তা।