সাড়ে ছয় বছরের রওশন আলি, পূর্ব ভারতে প্রথম সফল লিভার প্রতিস্থাপনের নজির সাড়ে ছয় বছরের শিশুটি। ২০০৮ সালে এসএসকেএম হাসপাতালে লিভার প্রতিস্থাপন শুরু হয়েছিল রওশনের মাধ্যমেই। তখন তার বয়স ছিল আট মাস। একরত্তি ছেলেকে লিভারের অংশ দান করেছিলেন তার বাবা রজব আলি। এখন আর পাঁচটা বাচ্চার থেকে রওশনকে কোনও ভাবেই আলাদা করা যায় না।
সারা রাজ্যে লিভার সংক্রান্ত অসুখে ভোগা মানুষের সংখ্যা নেহাতই কম নয়। সেই সমস্যার সমাধান করতেই সোনারপুরের ইন্সটিটিউট অফ লিভার অ্যাণ্ড ডায়জেস্টিভ সায়েন্স গঠন করতে চলেছে আন্তর্জাতিক উপদেষ্টা বোর্ড। দেশ এবং বিদেশের গবেষকরা এখানে লিভার সংক্রান্ত বিভিন্ন জটিল রোগের সমাধান করবেন।
রবিবার সোনারপুরে আইআইএলডিএসের দুটি নতুন ভবনের শিলান্যাস অনুষ্ঠানে দেশ-বিদেশের নানা চিকিৎসক এবং চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি রওশনও ছিল অন্যতম অতিথি।
লিভার ফাউন্ডেশন নামে পরিচিত এই সংস্থায় জন মার্টিন সেন্টার এবং মন্দিরা নামে দুটি ভবনের শিলান্যাস হয়েছে। লিভারের চিকিৎসার ক্ষেত্রে মূলত গবেষণামূলক কাজ হবে জন মার্টিন সেন্টারে। আইআইএলডিএসের পরিষেবা পরিধি বাড়ানোর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেবে মন্দিরা।
সরকারের দেওয়া জমিতে সম্পূর্ণভাবেই দানের অর্থে গড়ে উঠছে এই হাসপাতাল। এ দিন আউটডোর পরিষেবার মাধ্যমে হাসপাতালটির উদ্বোধন হল। এর পর ধাপে ধাপে ইন্ডোরে ১০০টি শয্যা চালু হবে। ২০১৯ সালের মধ্যে লিভার প্রতিস্থাপনের কাজও শুরু হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসার খরচ নিয়ে আকছার নানা অভিযোগ ওঠে। কখনও কখনও বিল না মেটাতে পারলে মৃতদেহ আটকে রাখার ঘটনাও ঘটে। এমন বহু ক্ষেত্রে মৃতদেহ ছাড়ানোর জন্য সরকারকে পর্যন্ত হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য মানুষকে যথাযথ পরিষেবা দেওয়া।’’
বস্তুত, সেই পরিষেবা দানের ভরসা এবং প্রত্যাশার কথাই উঠে এসেছে বিভিন্ন বক্তার কথায়। কেন তাঁরা এই প্রতিষ্ঠানের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, বিভিন্ন দাতা মঞ্চে উঠে জানান তাঁদের সেই সব প্রত্যাশার কথা। সকলের বক্তব্যের মূল সুরটা ধরা পড়ে ‘ওয়ার্ল্ড হেপাটাইটিস অ্যালায়েন্স’-এর সভাপতি চার্লস গোর-এর কথায়। ১৯৯৫ সালে হেপাটাইটিস সি এবং ১৯৯৮-এ সিরোসিস অব লিভার ধরা পড়েছিল গোর-এর। চিকিৎসায় সেরে ওঠার পরে পৃথিবী জুড়ে লিভারের চিকিৎসার প্রসারে কাজ শুরু করেন তিনি। লিভার ফাউন্ডেশন-এর সঙ্গেও তাঁর যোগাযোগ ওই প্রতিষ্ঠানের জন্ম থেকেই। গোর বলেন, ‘‘চিকিৎসার কোনও প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় শ্রেণি হতে পারে না। যে কোনও আর্থিক স্তরের মানুষেরই একই ধরনের চিকিৎসা প্রাপ্য। এই প্রতিষ্ঠানের কাছে আমার প্রত্যাশা সেটাই। সঠিক দামে সঠিক পরিষেবা মানুষকে পৌঁছে দেওয়াটাই যেন এর একমাত্র লক্ষ্য হয়ে ওঠে।’’
রবিবার ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আমেরিকা থেকে জন সি মার্টিন।উল্লেখ্য তাঁর নামেই একটি ভবনের নামকরণ হয়েছে। এছাড়াও ছিলেন ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাঙালি অধ্যাপক অরুণ সান্যাল, দিল্লির ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ লিভার অ্যান্ড বিলারি সায়েন্সের কর্ণধার অধ্যাপক শিবকুমার সারিন, ছিলেন মার্কিন কনসাল জেনারেল প্যাটি হফম্যান।