দেশ জুড়ে সন্ত্রাসের আবহ তৈরীর নোংরা খেলায় নেমেছে বিজেপি। লোকসভা ভোট ঘোষণা হবার পর থেকেই তাঁদের নৃশংসতার শিকার হচ্ছে মানুষ। এমনি সময়ে চলে হিন্দুত্ববাদের প্রচার করে মানুষকে কুক্ষিগত করার চেষ্টা আর এই ভোটের মুখে বিরোধী দলের কর্মীদের আক্রমণের মাধ্যমে সংঘর্ষের আবহই জারি রাখতে চাইছে ‘রামভক্তরা’। কিছুদিন আগেই বিনপুরের হাঁড়দায় তৃণমূলের দুই কর্মীকে গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে তাঁদের বিরুদ্ধে। এবার জলপাইগুড়ি জেলার ধূপগুড়িতে বিজেপির হামলায় গুরুতর জখম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।
শুক্রবার সকাল থেকেই কোচবিহারে বিজেপির সভায় যাওয়ার জন্য বাইরে থেকে দলে দলে লোক আসছিল।। অভিযোগ সেই মিছিল থেকেই এই আক্রমণ করা হয়। পুলিসের ওপর ইঁট পাথর ছোঁড়ার পাশাপাশি জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে লক্ষ্য করে ঢিল ছোঁড়ার ঘটনায় পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে ওঠে। গুরুতর জখম অবস্থায় অ্যাডিশনাল পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) থেন্ডুপ শেরপাকে শিলিগুড়ির নার্সিংহোমে পাঠানো হয়েছে। শুধু তাই নয়, হামলার জেরে অন্তত ১২ জন পুলিশকর্মী মারাত্মকভাবে জখম হয়েছেন।
ওই সভায় যে বিজেপির নেতা কর্মীরা গণ্ডগোল সৃষ্টি করতে পারেন এমন খবর আগে থেকেই ছিল পুলিশের কাছে এবং এই সভার কিছুদিন আগেই শিলিগুড়িতে প্রচুর অস্ত্র উদ্ধার হওয়ার পর আরও বাড়তি সতর্কতা গ্রহণ করেন তাঁরা।জলপাইগুড়ির গোশালা মোড় ও পাহাড়পুর এলাকায় ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে আটকে দেওয়া হয় বিজেপি কর্মীদের। একইভাবে ময়নাগুড়ি ও ধূপগুড়ি এলাকাতেও পুলিশকর্মীরা সন্দেহজনক বিষয়গুলি খতিয়ে দেখার জন্য যান। কিন্তু আচমকাই মারমুখী হয়ে ওঠে বিজেপির কর্মীরা। সূত্রের দাবি, এর পেছনে স্থানীয় নেতৃত্বের উসকানি ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, ফোনে নানা রকম নির্দেশও আসতে থাকে। তারপরই তাণ্ডব আরও বাড়ে। জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু করেন বিজেপি সমর্থকরা। বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা অবরোধ করা হয়। গোটা জেলা জুড়েই উত্তপ্ত পরিস্থিতি থাকায় ধূপগুড়ি পুলিশও ঘটনাস্থলে টিম করে যায়। সেখানে বিজেপির বাস আটকাতেই বিজেপি কর্মীরাই পুলিশের ওপর হামলা করে বলে অভিযোগ। এই নিয়ে পুলিশের সঙ্গে তাদের বচসা শুরু হয়। আচমকাই পুলিসকর্মীদের দিকে পাথর ছুঁড়তে থাকে একদল বিজেপি কর্মী। সেখানেই আহত হন পুলিশ সুপার। পুলিশের দিকে লাঠি নিয়েও তেড়ে আসা হয় বলে সূত্রের খবর।জেলা তৃণমূল নেতা রাজেশকুমার সিং জানিয়েছেন , ধূপগুড়ি গার্লস কলেজের এক অধ্যাপিকার ওপরেও বিজেপি কর্মীরা হামলা চালিয়েছে। তিনি কলেজ আসার সময় বিজেপি কর্মীরা তাঁকে বাধা দেয়।
স্বভাব মতই এমন নিন্দনীয় ঘটনার দায় সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে বিজেপি। বিজেপির উত্তরবঙ্গের কোর কমিটির সদস্য দীপেন প্রামাণিক পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা অস্বীকার করে বলেন, ‘পুলিশ নানান জায়গায় বিজেপি কর্মীদের আটকানোর চেষ্টা করে। যেখানে পুলিশের সংখ্যা বেশি ছিল, সেখানে তারা আমাদের কর্মীদের আটকে রেখেছিল। যেখানে পুলিশ কম ছিল, সেখানে তাদের আটকাতে না পেরে ছেড়ে দিয়েছে।’
বিজেপির এই তাণ্ডবকে ঘিরে এলাকা একরকম রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। মুহূর্তে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে শালবাড়ি সংলগ্ন জুরাপানি এলাকা। জখম হয়েছেন ধূপগুড়ি থানার আইসি সুবীর কর্মকার, সাব–ইনস্পেক্টর সুনীল বর্মন, পরিতোষ বসাক, তপন দাস, দিলীপ সরকার–সহ বেশ কয়েকজন। পুলিশকর্মীদের দাবি, ধূপগুড়ি থানার সাব–ইনস্পেক্টর দিলীপ সরকারকে রাস্তায় ফেলে পেটানো হয়। তিনি প্রাণে বাঁচতে একটি সরকারি বাসে উঠলে ক্ষিপ্ত বিজেপি কর্মীরা বাসটিতেও ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ। ঘটনায় বাসের বেশ কয়েকজন যাত্রী–সহ আহত হন বাসের চালক। কয়েকজন সিভিক ভলান্টিয়ারও আহত হয়েছেন। তাঁদের সবাইকেই প্রথমে ধূপগুড়ি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। ভিডিও ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের চিহ্নিত করার কাজ চালাচ্ছেন জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশের কর্তারা। রাতের মধ্যেই হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।