বর্ষাকাল এলেই বাঙালি ইলিশ মাছের খোঁজ করে। অথচ সবসময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে ইলিশ পাওয়া যায় না। অনেক ক্ষেত্রে ছোট বা ‘খোকা’ ইলিশ ধরে ফেলার জন্যেও জোগান কমে যায়। খোকা ইলিশ ধরা কার্যত নিষিদ্ধ এখন। তাই ইলিশের জোগান বাড়াতে নয়া পদক্ষেপ রাজ্য সরকারের। গঙ্গায় শুধুমাত্র ইলিশের জন্য সংরক্ষিত এলাকা বা ‘ফিশ স্যাংচুয়ারি’ তৈরি করতে চলেছে রাজ্য সরকার।
গঙ্গার প্রায় ৩৫ কিলোমিটার এলাকাকে এই কাজের জন্য নির্ধারণ করেছে মৎস্য দফতর। তাঁদের সমীক্ষা অনুযায়ী গঙ্গায় প্রতি বছর যে পরিমাণ ইলিশ আসে তার থেকে মাত্র ২০% সংরক্ষণ করতে পারলেই দু’বেলাই বাঙ্গালির পাতে ইলিশ তুলে দেওয়া সম্ভব। সেই সংরক্ষণের জন্যই এই স্যাংচুয়ারির ভাবনা। তার জন্য ১৯৯৭ সালের ‘ইনল্যান্ড ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন আক্ত’-এও কিছু পরিবর্তন করে ৩৫ কিলোমিটার এলাকাকে সংরক্ষিত হিসাবে ঘোষণা করবে মৎস্য দফতর।
জানা গেছে সংরক্ষিত এলাকায় বর্ষার সময় কোনও মাছ ধরা যাবে না। এমনকি মাছ ধরার নৌকাও যদি ওই এলাকা দিয়ে যায় তা বাজেয়াপ্ত হতে পারে। ওই এলাকায় কোনও প্রকার প্লাস্টিক, থার্মোকল এবং শিল্প-কারখানার বর্জ্য ফেলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হবে। এই বিষয়ে কঠোর ভাবে আইন প্রণয়নের জন্য পরিবেশ দফতরের সাথে আলোচনাও হয়েছে।
মৎস্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘প্রতি বছর বর্ষাকালে সাগর থেকে যে পরিমাণ ইলিশ আসে, গঙ্গায় তার ২০% ডিম পাড়ার পর ভাঁটার সময়ে আর ফিরে যেতে পারে না কারণ পলির জন্য স্রোত কমে গিয়েছে। তাই আটকে থাকা এই মাছ সংরক্ষণ করতে পারলেই ইলিশের উৎপাদন যথাযথ হবে। তাই এই উদ্যোগ।’
গত বছর ইলিশ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল প্রায় ২২ হাজার মেট্রিক টন। এবার আরও বেশি। মৎস্য মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা জানিয়েছেন, ‘মুর্শিদাবাদের লালবাগ থেকে ফারাক্কা, বর্ধমানের কাতয়া থেকে হুগলীঘাট এবং দক্ষিণ ২৪ পরগণার ডায়মণ্ডহারবার থেকে নিসচন্দ্রপুর পর্যন্ত এলাকাকে স্যাংচুয়ারি বলে ঘোষণা করতে চলেছে রাজ্য সরকার।’ জানা গেছে ডায়মণ্ডহারবারে ইলিশের গবেষণা কেন্দ্র তৈরি করা হবে। আরও অত্যাধুনিক ব্যবস্থার জন্য এই মাসেই বিদেশে পাড়ি দিতে চলছেন রাজ্যের একদল ইলিশ গবেষক।