ভোটের মুখে বিজেপির বসুন্ধরা রাজের ওপর বেজায় খাপ্পা রাজস্থানের সরকারি কর্মীরা। তাঁদের মুখে এখন একটাই কথা, ‘যাকে খুশি ভোট দেব, এমনকী নোটাতে বোতাম টিপে ভোট নষ্ট করব, কিন্তু কিছুতেই বিজেপি-কে ভোট দেব না’৷
বসুন্ধরার বিরুদ্ধে রাজস্থানের সরকারি কর্মীদের কেন এমন ক্ষোভ? এক সরকারি কর্মচারির কথায়, ‘আমাদের সপ্তম বেতন কমিশনের বকেয়ার টাকা বিলকুল হজম করে দিল বসুন্ধরা রাজে সরকার৷ আমাদের নতুন হারে বেতন পাওয়ার কথা ২০১৬-র জানুয়ারি থেকে৷ আর সপ্তম বেতন আয়োগের সুপারিশ কার্যকর করা হল, ২০১৭ সালের নভেম্বর থেকে৷ এক বছর দশ মাসের বকেয়া নিয়ে সরকার কোনও কথা শুনতেই রাজি হল না৷ অন্য দবিও মানা হল না৷ রানির জেদ আছে, ভালো কথা, কিন্ত্ত ভুলে যাবেন না, সরকারি, আধা সরকারি মিলিয়ে রাজস্থানে দশ লাখ কর্মচারি আছে, আমাদেরও ভোট আছে৷ আমরা তো ধর্মঘট করেছিলাম৷ নেহাত ভোট হচ্ছে বলে তা তুলে নিতে হল’৷
যোধপুর, বাঢ়মের, জয়পুর, কোটা, টঙ্ক যে জায়গাতেই সরকারি কর্মীদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে, তাঁরাই বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছেন৷ যোধপুরের রোডয়েজ কর্মী ব্রজেশ বলেন, ‘তাঁরা যখন আন্দোলন করছিলেন, তখন বসুন্ধরা সরকার নো ওয়ার্ক, নো পে নীতি নিয়েছিলেন৷ সরকারি কর্মীদের শক্তির বিষয়টি উনি ভুলে গিয়েছিলেন৷ ভুলে গিয়েছিলেন, ২০০৩ সালে আমরাই কীভাবে আশোক গেহলটকে শিক্ষা দিয়েছিলাম৷’কথাটা ভুল বলেননি ব্রজেশ৷ ১৯৯৯-২০০০ সালে গেহলটের আমলে সরকারি কর্মীরা ৮৮ দিন স্ট্রাইক করেছিলেন৷ গেহলট আন্দোলনের নেতাদের জেল পর্যন্ত পাঠিয়েছিলেন৷ তার ফল হল, ২০০৩-এ গেহলটের শোচনীয় পরাজয়৷ ১৫৩ থেকে কংগ্রেসের আসন নেমে এসেছিল ৫৬-তে৷ অথচ, গেহলট তখনও বেশ কিছু গরিব-মুখী প্রকল্প চালু করেছিলেন৷ লোকে তার ঢালাও প্রশংসাও করেছিলেন৷ কিন্ত্ত সরকারি কর্মীরা তাঁদের ক্ষমতা দেখিয়ে দিয়েছিলেন৷ পরের বার অর্থাৎ ২০০৮-এ ক্ষমতায় এসে গেহলট আর সরকারি কর্মীদের চটাননি৷ কিন্ত্ত এবার দেখা যাচ্ছে, ইতিহাস থেকে রানি কোনও শিক্ষা নেননি৷ এ বার সরকারি কর্মীরাও তাঁকে শিক্ষা দেওয়ার মানসিকতা নিয়ে ভোট দিতে উদ্যত৷
সত্যি সত্যি সরকারি কর্মীদের ক্ষোভ যদি ভোটের বাক্সে গিয়ে পড়ে, তা হলে বসুন্ধরার কপালে দুঃখ আছে৷ এই ক্ষোভের ক্ষেত্রে জাতপাত কাজ করে না, হিন্দুত্বের বিষয়টিও গৌণ হয়ে যায়৷ অতীতে একাধিকবার দেখা গিয়েছে, সরকারি কর্মীরা ভোটে তাঁদের হিসাব চুকিয়ে দিয়েছেন৷ ফল, এখনই বলে দেওয়া যায় রাজস্থানে বিজেপির বিদায় ঘণ্টা নিশ্চিত।