এবার জাতপাতের জাঁতাকলে আটকা পড়লেন স্বয়ং বজরংবলীই। কারণ ত্রেতা যুগেও যা হয়নি, কলিতে তাই করে দেখাচ্ছে বিজেপি। সদ্যই রাজস্থানে বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে গিয়ে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ দাবি করেছেন, বজরংবলী দলিত। যা নিয়ে বিতর্কের জল গড়িয়েছে বহুদূর। আর এবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও উত্তরপ্রদেশেরই বিজেপি সংসদ সত্যপাল সিংহের দাবি, বজরংবলী মোটেই দলিত নন, তিনি রীতিমত আর্যকুলোদ্ধব।
রাজস্থানের আলোয়ারে হওয়া নির্বাচনী জনসভায় যোগী হনুমানকে স্রেফ ‘দলিত’ বলেই থেমে থাকেননি। তাঁর কথায়, বজরংবলী হলেন এমনই একজন যিনি একইসঙ্গে লোকদেবতা, বনবাসী, গির বাসী, দলিত ও বঞ্চিত আদিবাসী। তবে সেই বক্তব্য মানতে রাজি নন তাঁর দলের নেতারাই।
বিজেপি বিধায়ক সুরেন্দ্র সিংহ বলেছেন, কোনও দেবতার জাতপাত বিচার করা ঠিক নয়। যোগীর কথার সমালোচনা করেছেন উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপাল রাম নায়েকও। আবার জাতীয় তফশিলি উন্নয়ন কমিশনের চেয়ারম্যান নন্দকুমার সাঁই হনুমানকে দলিত নয় আদিবাসীদের ভগবান বলে ঘোষণা করেন।
আর এবার উঠে এল বজরংবলীর আরও এক ‘কাস্ট সার্টিফিকেট’! যেখানে কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী সত্যপালের যুক্তি, ভগবান রাম ও হনুমানের যুগে এ দেশে কোনও জাতি ব্যবস্থা ছিল না। কেউ দলিত, বঞ্চিত, শোষিত ছিল না। রামায়ণ আর রামচরিতমানস পড়লেই এ কথা বোঝা যায়। সত্যপালের এমন মন্তব্যের পরে আবারও শুরু হয়েছে বিতর্ক।
তবে এই প্রথম নয়। আগেও এমন ভিত্তিহীন মন্তব্য করে বিতর্কের শিরোনামে এসেছিলেন সত্যপাল। এর আগে তিনি দাবি করেছিলেন চার্লস ডারউইনের নরবানর থেকে মনুষ্য প্রজাতির সৃষ্টির বিবর্তন তত্ত্ব নাকি ‘বিজ্ঞানসম্মতভাবে ভুল’। তাই শীঘ্রই তা স্কুল-কলেজের পাঠ্যবই থেকে সরিয়ে দেওয়া দরকার। তাঁর ‘যুক্তি’ ছিল, ‘আমাদের পূর্বপুরুষ কোনওভাবেই কোথাও বলে যাননি যে নরবানর থেকে তাঁরা মানুষে পরিণত হয়েছে। কোনও বইতে আমরা পড়িনি, এমনকী এ বিষয়েও গল্পও শুনিনি আমাদের দাদু-ঠাকুমার কাছে।’
রামায়ণ বলছে, নিজের বুক চিরে রাম-সীতার ছবি দেখিয়েই অশেষ রামভক্তির প্রমাণ দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু যেভাবে নিজেদের ইচ্ছেমতো তাঁর জাতপাত নিয়ে কাটাছেঁড়া করতে উঠে পড়ে লেগেছেন বিজেপির নেতারা, তাতে জাতের প্রমাণ দিতে বোধহয় এবার থেকে বুকে করে কাস্ট সার্টিফিকেট নিয়েই ঘুরতে হবে বজরংবলীকে।