প্রবচন আছে, মানুষ অভ্যাসের দাস। বহুকাল কোনও কিছুতে অভ্যস্ত হয়ে গেলে তা স্বভাবে দাঁড়িয়ে যায়। আর ঠান্ডাঘরে বসে বড় বড় বুলি আউড়ে যাওয়াই চিরকালের স্বভাব আলিমুদ্দিনের বাবুদের। সেই স্বভাব যায়নি এখনও।
বাংলায় বিলুপ্তপ্রায় হয়ে যাওয়া সিপিএমের তরফে সদ্যই ঘোষণা করা হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে কলকাতা অবধি এক দীর্ঘ পদযাত্রার। কিন্তু পদযাত্রার দিন আলিমুদ্দিনের কাঁচ ঢাকা এসি ঘরে বসেই কাটিয়ে দিলেন রাজ্যনেতারা। আসলে ৩৪ বছর ধরে এ রাজ্যে ক্ষমতায় বসে থাকার পর পথে ঘাটে নেমে আন্দোলন করা তো ভুলেই গেছেন তাঁরা। ফলে এসি ঘর থেকে বেরিয়ে রাস্তায় হাঁটা আর স্বভাবে নেই তাঁদের। তাছাড়া বয়সের ভারে বাতের ব্যাথাও বাড়ে। বয়স তো আর কম হল না ওই বিদ্যেবোঝাই বাবুমশাইদের।
তাই ধানের ক্ষেতে নয়, আড়মোড়া ভেঙে নেতারা হাজির হলেন ধর্মতলায়। এ যেন টাটারা টাটা করে চলে যাওয়ার পর ন্যানোর স্মরণসভা। সভামঞ্চ না বলেও শোকসভার আসর বলাই ভালো। কারণ প্রথমে সিঙ্গুর ও পরে গুজরাটের সানন্দ থেকে টাটা ন্যানোর প্রত্যাশিত অকালপ্রয়াণের ফলে শোকে কাতর হয়েই আলিমুদ্দিনের বাবুরা হুজুগ তুলেছিলেন সিঙ্গুরের কৃষকদের নিয়ে পদযাত্রা করে কলকাতা যেতে হবে।
তবে ঘোষণার পরেও সিঙ্গুর থেকে ১০ হাজার কৃষক তো হয়ইনি, উল্টে কলকাতা এবং শহরতলির এলাকা থেকে লোকজন নিয়ে যাওয়ার পরও মিছিলের স্রোত ছিল ছিল শুকিয়ে যাওয়া খালের মতোই। যদিও ঝাঁটা জুতো খাওয়ার ভয়ে রাজ্যস্তরের নেতারা সিঙ্গুর মুখো হননি। সিঙ্গুরের চৌহদ্দির মধ্যেও দেখা যায়নি কোনও আলিমুদ্দিনের বাবুকে। সেখানকার কৃষক পরিবারের মেয়ে বউরা প্রকাশ্যেই সিপিএমের নেতাদের ঝাঁটা জুতো নিয়ে তাড়া করার হুমকি দেওয়াতে ধারে কাছে ঘেঁষার চেষ্টা করেননি কেউ।
সমাবেশে সিঙ্গুর থেকে ন্যানো চলে যাওয়ার জন্যে একে একে প্রত্যেক বক্তাই শোক বিহ্বল কণ্ঠে দীর্ঘক্ষণ প্রায় চোখের জলে নাকের জলে অবস্থায় স্মারক বক্তৃতা পাঠ করেন। ন্যানো বন্ধ হওয়ার পরে খোদ রতন টাটা নিজেও যত না শোক বিহ্বল হয়েছিলেন, সভামঞ্চে তার চেয়েও বেশি আকুল হয়ে পড়লেন সূর্যকান্ত মিশ্র। ন্যানো চলে যাওয়ায় তিনি প্রায় স্বজনহারা মানুষের মতোই কেঁদে ভাসালেন। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘সিঙ্গুরে ন্যানো কারখানা হলে এখন ওখানে আড়াই লক্ষ করে ন্যানো গাড়ি তৈরি হত।’ আসলে সূর্যবাবু হয়ত জানেন না, সানন্দ থেকেও সানন্দে উঠে গেছে ন্যানো কারখানা।
তবে ফটোশুটের জন্যে রানি রাসমণি রোডে অমিয় পাত্ররা তাও একবার পদযাত্রা করে আসা শহুরে কৃষকদের সাথে পোজ দিলেন। ফেসবুকে পোস্ট দিতে হবে তো। এখন যে শোকসভার ছবি পোস্ট করেও সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইক কুড়ানো যায় বা প্রচারে আসা যায়, তা ভালই জানেন আলিমুদ্দিনের স্যুটেড বুটেড বাবুরা।