লোকসভা নির্বাচনের আগে মনোবল ভেঙে পড়া দলীয় কর্মীদের চাঙ্গা করার পাশাপাশি নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে সিঙ্গুরের কৃষকদের নিয়ে রাজভবন অভিযানের ডাক দিয়েছে বামেদের কৃষক সংগঠন। কিন্তু সিঙ্গুরের কৃষকেরা সিপিএমের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। এবারও মুখ ফিরিয়েই রইল। কৃষক মিছিলে দেখা গেল না কৃষকদেরই।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র যতই জানান মিছিল হবে কেবলমাত্র সিঙ্গুরের ১০ হাজার কৃষক নিয়ে। বাস্তবে আদৌ তেমনটা ঘটেনি। কৃষক সংগঠনের এই মিছিলে সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক চাষিরা যে যোগ দেবেন না, সেটা একপ্রকার নিশ্চিত ছিলই। কিন্তু সিপিএমের জামানায় তাদের পাশে থাকা অধিকাংশ ইচ্ছুক চাষীও অংশ নিলেন না মিছিলে। কেনই বা নেবেন? মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে কৃষকদের আয় বেড়েছে ৩ গুণ। কৃষি ঋণে সুদের হারে ২ শতাংশ ছাড় দিচ্ছে রাজ্য সরকার। এরপরে যতই কৃষক-দরদ দেখাক সিপিএম, সেটা যে ‘ছদ্ম প্রেম’ তা বুঝে ফেলেছে বাংলার কৃষকেরা।
তাই কৃষক মিছিল ভরাতে ঝেটিয়ে ছাত্র-যুব-মহিলা ও সিটু কর্মীদের মিছিলে হাঁটাল সিপিএম। আর ছিলেন শহুরে ‘কৃষকেরা’। কাঁধে ল্যাপটপ ঝুলিয়ে তাঁরা মিছিলে অংশ নিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা বিশেষত যাদবপুরের ছাত্ররা বজ্রমুষ্ঠি আকাশে ছুঁড়ে ‘কৃষক স্লোগান’ দিলেন। সেই স্লোগান, মিছিলের ছবিতে ছেয়ে গেল সোশ্যাল মিডিয়াও। কাঁধে লাল পতাকা আর হাতে ফ্রুট জুস নিয়ে উঠল মুর্হুমুহু সেলফিও।
এমন ‘কৃষক দরদি’ মিছিল শুরু হওয়ার কথা ছিল সিঙ্গুরের বাজেমেলিয়া থেকে। কিন্তু সেখানকার মহিলারা সিপিএম কর্মীদের জন্য ঝেঁটা-জুতো নিয়ে অপেক্ষা করছেন শুনে মিছিল শুরু হল রতনপুর থেকে। মিছিলের সূচনা করলেন ৮ বার উলুবেড়িয়ার এমপি থাকা স্বত্বেও সাধারণ মানুষ যাকে চেনেন না সেই হান্নান মোল্লা। এখন প্রশ্ন, এই মিছিলে কেন অংশ নিলেন না সিপিএমের বড় নেতারা? রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র এসি গাড়ি থেকে নেমে যখন হাঁটতে এলেন তখন মিছিল ১০ কিলোমিটার এগিয়ে ডানকুনির কাছে পৌঁছে গেছে। তিনি গাড়ি থেকে নেমে ক্যামেরার সামনে পোজ দিয়ে মিছিলে অংশ নিলেন।
বুধবার ডানকুনিতে শেষ হয়েছে পদযাত্রা। সিপিএমের দাবি প্রায় ৬০ হাজার কৃষক অংশ নিয়েছেন তাঁদের মিছিলে। বুধবার মিছিল শেষে ডানকুনি এবং সংলগ্ন এলাকায় রাত কাটিয়েছেন হাজার খানেক পদযাত্রী। এখন প্রশ্ন, বাকি কৃষকেরা কোথায় গেলেন?
আজ বৃহস্পতিবার ডানকুনি থেকে এই মিছিল হাওড়া ব্রিজ টপকে রাজভবন অভিমুখে রওনা দিয়েছে। জানা গেছে, রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র নির্দেশ দিয়েছেন, যত বেশী সম্ভব বড় বাঁশের লাঠি জোগাড় করে আনতে। যাতে প্রয়োজন পড়লে সেই ডান্ডা দিয়েই পুলিশকে আক্রমণ করা যায়। অর্থাৎ ছদ্ম কৃষক মিছিলের মাধ্যমে অরাজকতা তৈরির ছকও তৈরি করে ফেলেছে আলিমুদ্দিন।