এ যেন ঠিক ‘কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা’! হিন্দুত্ববাদের দোহাই দিয়ে রাজ্যে সন্ত্রাসের আবহ তৈরী করাই বরাবর বিজেপির লক্ষ্য৷ নিজেদের আধ্যাত্মিক ভাবমূর্তি বজায় রাখার জন্যই ডিসেম্বর মাসে রথযাত্রার মাধ্যমে বাংলায় লোকসভা নির্বাচনের প্রচার শুরু করার কূট-কৌশল নিয়েছিল তারা৷ কিন্তু আবারও মুখ্যমন্ত্রীর ভাবনার অভিনবত্বের কাছে হারল বিজেপি৷ তাদের কর্মপন্থার পাল্টা হিসাবে ‘পবিত্রযাত্রা’র কর্মসূচি পালনের নির্দেশ দিয়েছেন মমতা৷
বিজেপি সবসময়ই চেয়েছে, মানুষের মধ্যে ধর্মীয় বিভাজন৷ অথচ মুখ্যমন্ত্রী সবসময়ই ধর্মীয় নিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী৷ তাই বিজেপির এই অভিসন্ধিকে অসফল করার জন্যই তাদের কর্মসূচির পরদিনই ওই যাত্রাপথকে শুদ্ধ করার উদ্দেশ্যে বিশুদ্ধ রীতিতে শাঁখ বাজিয়ে গঙ্গাজল গোবরজল ছড়িয়ে পবিত্রযাত্রার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল৷ দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এই যাত্রার অগ্রভাগে জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রার কাটআউট রাখতে হবে৷ ইতিমধ্যেই ব্লকগুলিতে জেলা নেতৃত্বের উদ্যোগে এই কর্মসূচির নির্দেশিকা পাঠানো শুরু হয়েছে৷
গত কয়েক বছরে বাংলায় শাসক দল ছাড়া অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর দুর্বলতা বৃদ্ধির সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি৷ সংঘাত ধর্মীয় বিভেদ এবং হিন্দুত্ববাদের ওপর ভর করেই বাংলা দখল করার উদ্দেশ্য তাদের৷ যদিও বা রাজ্যের মানুষ বারেবারে ফিরিয়ে দেয় তাদের৷ মানুষের যাবতীয় আস্থা মমতার উপরেই৷ সেই আস্থার দাম দিতেই পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করে এমনিতেই কোণঠাসা বিজেপির ওপরে আরো চাপ সৃষ্টি আনছে তৃণমূল৷ দলের সাধারণ পরিষদের সভায় নেতা-কর্মীদের ধর্ম নিয়ে রাজনীতির বিরুদ্ধে একজোট হয়ে লড়াই করার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা৷ তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ‘ওরা চায় ধর্মীয় বিভাজন৷ কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যবাসীকে উন্নয়নে সামিল করে সম্প্রীতি কায়েমে সদাই সচেষ্ট৷ তাই পবিত্রযাত্রার মাধ্যমে সেই সর্বধর্ম সমন্বয়ের বার্তাই দেবে তৃণমূল’৷
মমতার ঘোষণা অনুযায়ী, যেদিন যে এলাকা দিয়ে বিজেপির রথযাত্রা যাবে ঠিক তার পরদিনই ওই একই পথে পবিত্রযাত্রা হবে৷ এই কর্মসূচী পালন করার নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে লাল পাড় শাড়ি পরে গঙ্গাজল বা গোবর জলপূর্ণ মঙ্গলঘট থেকে আম্রপল্লব দিয়ে মহিলারা জল ছিটিয়ে রাস্তা শুদ্ধ করবেন৷ যাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের হাতে মুখ্যমন্ত্রীর ছবিসহ পতাকা থাকবে৷
তৃণমূলের এক বর্ষীয়ান নেতা বলেছেন, ‘বিজেপি যেভাবে একতরফা হিন্দুদের প্রতিনিধি বলে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে তা মোটেও কাম্য নয়’৷ বিজেপি প্রকৃত অর্থেই বাংলার জন্য অশুভ শক্তি, সন্ত্রাস সৃষ্টিই যাদের লক্ষ্য৷ তাই পবিত্রযাত্রা কর্মসূচির মাধ্যমে মমতা আরো একবার স্পষ্টই জানিয়ে দিলেন এই রাজ্যে সন্ত্রাস বা অপশক্তির কোনো স্থানই নেই৷