নাগরিকত্ব বিল চূড়ান্ত করতে দীর্ঘ তিন ঘণ্টার বৈঠকেও ঐক্যমতে পৌঁছতে পারল না যৌথ সাংসদীয় কমিটি। ফলে নির্দিষ্ট সময়ে রিপোর্ট পেশ হবে কিনা তা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গেল। জেপিসি-র পরবর্তী বৈঠকের দিনও স্থির করা যায়নি। শীতকালীন অধিবেশনের মধ্যে কমিটির রিপোর্ট পেশ না হলে বিল পাশের সম্ভাবনা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। তা স্বত্বেও সংসদীয় কমিটির বৈঠকে কোনও সিদ্ধান্ত না হওয়ায় রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নাগরিকত্ব বিল নিয়ে আপাতত পিছু হটতে হল মোদী সরকারকে।
এই বিলের মূল বিষয়বস্তু হল, প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ইত্যাদি থেকে যেসব ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা অত্যাচারিত হয়ে ভারতে আসবে, তাঁদের নাগরিকত্ব দেবে সরকার। কিন্তু এই দেশগুলোর সংখ্যাগুরু মানুষ ভারতে চলে এলে তাদের অনুপ্রবেশকারী হিসাবে চিহ্নিত করা হবে। এখানেই আপত্তি বিরোধীদের। তাঁদের বক্তব্য, ধর্মীয় উৎপীড়নের ফলে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলি থেকে আসা উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে এভাবে ধর্ম বিচার করা ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার ভাবনায় আঘাত হানা হবে। যা সংবিধান বিরোধী।
আশ্চর্যের বিষয় হল, আসামের দুই বিজেপি সদস্য বিল নিইয়ে টুঁ শব্দটিও করেননি। মৌন থেকে কার্যত তাঁরা বিরোধীদের শক্তিই বাড়িয়েছেন। এই বিল নিয়ে এখন বিজেপির অবস্থা শাঁখের করাতের মতো। শুধু বিরোধী দলই নয় কয়েকটি শরিক দলও এই বিল নিয়ে আপত্তি তুলেছে। আসামে বিজেপির শরিক ‘আসাম গণ পরিষদ’ বিল পাশ হলে জোট ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়ে রেখেছে। আসামে এই বিলের বিরুদ্ধে আন্দোলনও চলছে। সীমান্তবর্তী কয়েকটি রাজ্যেও বিল নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। একইসঙ্গে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে আসামে বিজেপি সরকারের মন্ত্রী হেমন্ত বিশ্ব শর্মাকে স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিস পাঠাচ্ছে জেপিসি। তারওপর বিজেপির রাজ্যসভার সদস্য বিনয় সহস্রবুদ্ধে বৈঠকে বলেন, ‘বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্ষকাতর। তাই বিলটি নিয়ে তাড়াহুড়ো না করাই ভালো’। সব মিলিয়ে নাগরিকত্ব বিল নিয়ে এনডিএ শরিক দলগুলির অন্দরেই অর্ন্তকলহ তুঙ্গে। ফলে ‘মহাগটবন্ধন’ যে জোর ধাক্কা খেল সেটা পরিষ্কার।
প্রসঙ্গত, এই নাগরিকত্ব বিল নিয়ে ২১ মাস ধরে চলছে আলাপ আলোচনা। তারপরেও ঐক্যমত্যে পৌঁছনো যায়নি। একদিকে বিল নিয়ে বিজেপির শরিক দলগুলির আপত্তি। অন্যদিকে বিরোধীদের আপত্তি। সব দেখেশুনে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ঠান্ডা ঘরেই ঠাই হতে চলেছে নাগরিকত্ব বিলের।
এই বৈঠকে বিলের তীব্র বিরোধিতা করেন কংগ্রেস, তৃণমূল, এসপি, বিএসপি, ডিএমকে সদস্যরা। ফলে বিলের প্রতিটি ধারা নিয়ে আলোচনা সম্ভব হয়নি। অবশ্য বিজেপি নেত্রী মীনাক্ষি লেখি অবিলম্বে বিলটি পাস করা উচিত বলে মন্তব্য করেন। প্রসঙ্গত, ৩০ সদস্যের এই কমিটিতে সরকার পক্ষে রয়েছেন ১৮ জন সাংসদ। বিরোধীপক্ষে ১২ জন। কমিটির চেয়ারম্যান বিজেপি সাংসদ রাজেন্দ্র আগরওয়াল।
বৈঠকের পর তৃণমূল সাংসদ ও মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন একটি স্মাইলি-সহ টুইটে লিখেছেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী সংসদীয় কমিটির বৈঠক নিয়ে বাইরে কিছু বলা নিষেধ। নিয়ম কখনও লঙ্ঘন করিনি। তবে এদিনের বৈঠক সম্পর্কে এইটুকুই (স্মাইলি) যথেষ্ট।