দীপা কর্মকার নামটি প্রথম আলোচ্য বিষয় হয়ে ওঠে , যখন ২০১৪ সালে গ্লাসগোতে আয়োজিত কমনওয়েলথ গেমসে প্রথমবার ব্রোঞ্জ জেতেন৷ যে প্রোদুনোভা ভল্ট বিশ্বের মারাত্মক ভল্টগুলির মধ্যে অন্যতম, সেই ভল্টই দীপাকে এনে দিয়েছে একের পর এক আন্তর্জাতিক সাফল্য৷ ক্রীড়ামঞ্চে দেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন তিনি৷
কিছুদিন আগেই তুরস্কে আয়োজিত ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জিতেছিলেন তিনি৷ পরবর্তী লক্ষ্য ছিল জার্মানি৷
ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপের পর আর্টিস্টিক জিমন্যাসটিক্স ওয়ার্ল্ড কাপে পদক পেলেন দীপা কর্মকার। ভারতীয় জিমন্যাসটিক্সে অবশ্যই ইতিহাস গড়ার পথে এগিয়ে গেলেন ত্রিপুরার মেয়ে। তবে তুরস্কে পেয়েছিলেন সোনা। এখানে পেলেন ব্রোঞ্জ।কিন্তু, তাতে কী! এই পদক পেয়ে টোকিও যাওয়ার ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেকটা এগিয়ে গেলেন তিনি। এখন অস্ট্রেলিয়া, দোহা বা বাকুরের মধ্যে দু’টো জায়গায় পদক পেলেই দীপার টোকিও যাওয়া নিশ্চিত হয়ে যাবে।
যদিও প্রোদুনোভা দীপার স্বাচ্ছন্দ্যের ক্ষেত্র কিন্তু এখন মূলত দু’টো ভল্টের ওপর ভর করে এগোচ্ছেন তিনি। এক, পাইক ফ্রন্ট সমারসল্ট উইথ ৩৬০ ডিগ্রি টার্ন, দুই, সুকুহারা স্ট্রেট বডি উইথ ৭২০ ডিগ্রি টার্ন। শনিবারও যথারীতি ওই দু’টো ভল্টেই বাজিমাত করে বেরিয়ে যান তিনি। কিন্তু সমস্যা দাঁড়ায় পাইক ফ্রন্ট সমারসল্টের ক্ষেত্রে। এই ভল্টে দীপা ৩৬০ ডিগ্রি টার্ন নেন। যদি ৫৪০ ডিগ্রি টার্ন নিতে পারতেন তাহলে তাঁর সোনা পাওয়া কেউ আটকাতে পারত না। কোচ বিশ্বেশ্বর নন্দী ঠিক করে দিয়েছিলেন, দীপা যেন কোনওমতে ৩৬০ ডিগ্রির বেশি দেওয়ার চেষ্টা না করেন। কারণ তার চেয়ে বেশি দিতে গেলেই চোট পাওয়ার সম্ভাবনা থাকত। অথচ দীপা ৫৪০ ডিগ্রি ভল্ট দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। তাই দীপা ১৪, ৩১৬ পয়েন্ট পেয়ে ব্রোঞ্জ পেয়েছেন। সোনা ও রুপো পান যথাক্রমে ব্রাজিলের রেবেকা আন্দ্রে ও আমেরিকার জ্যাড ক্যাবে।
জিমন্যাসটিক্সের নিয়ম হল, অলিম্পিকে যাওয়ার ছাড়পত্র তখনই একজন জিমন্যাস্ট পান, যখন চার পাঁচটা বিশ্বকাপে তিনি পদক পান। ইতিমধ্যেই দু’টো পদক হয়ে গেল দীপার। বাকি দু’টো পদক পেলেই দীপার টোকিও যাওয়া। তাঁর কোচ বিশ্বেশ্বর নন্দী বলেন, ‘দীপার উপর বিশ্বাস ছিল। জানতাম ফিট থাকলে ওকে রোখা মুশকিল। তাই নামার আগে শুধু বলেছিলাম, যা করিস না কেন মাথা ঠান্ডা রেখে এগোবি। সেই কাজটাই করেছে ও৷ দীপা এমনিতেই খুব বাধ্য, আমি ওর সাফল্যে গর্বিত’৷
প্রসঙ্গত, বক্সার মেরি কমের আরো একবার ইতিহাস গড়ার দিনেই পদক পেলেন দীপা৷ এই জয় প্রমাণ করে দিল শুধুমাত্র প্রোদুনোভা নয়, সব ধরণের ভল্টেই সমান দক্ষ তিনি৷