ঝড়ে টলমল মোহনবাগানের ঐতিহ্যবাহী সবুজ মেরুন পালতোলা নৌকা — সন্দীপ মজুমদার

মোহনবাগান শব্দটার সাথে জড়িয়ে আছে কোটি কোটি বাঙালির ভালোবাসা, আত্মগরিমা আর অহংকার৷ ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান সমর্থকদের সাথে খোলামেলা লড়াই সারা পৃথিবীতে সুপরিচিত। ফেসবুকের মত সামাজিক মাধ্যমে ফ্যান ক্লাবে চলে সমর্থকদের সরাসরি ধারাবিবরনী। অজানা অদেখা এক সমর্থককে আরেকজন নিঃসংকোচে প্রশ্ন করেন দাদা কি হবে আজকের ম্যাচে, বা কাপ এবার আমাদেরই হবে তো?

রাজ্য বা জাতীয় স্তরে মোহনবাগানের অবদান ও সাফল্য প্রশ্নাতীত। শুধুমাত্র কর্পোরেটদের ওপর ভরসা করে ১০০ বছরের বেশি সময় টিকে থাকার নজির নেই, কিন্তু সমর্থকদের ভালোবাসায় দল টিকে থাকতে পারে, মোহনবাগান তারই উদাহরণ। আধুনিকতার পথে উত্তরণ অবশ্যই কাম্য কিন্তু অস্তিত্ব ও ঐতিহ্যের বিসর্জন দিয়ে অবশ্যই নয়।

ইস্ট-মোহনের খেলায় কখনো কখনো শালীনতার পর্যায় পার করে স্লোগান বা ব্যানার, বড় ম্যাচে পতাকা পোড়ানো, পাথর ছোঁড়া এসব তো বরাবরই হয়ে এসেছে। এইসব অখেলোয়াড়ী মনোভাব সমর্থনযোগ্য না হলেও, সমর্থকদের ভালোবাসা নিয়ে প্রশ্ন করার যোগ্যতা আমার নেই। যে ভালোবাসার জন্য দলবদলের আগে খেলোয়াড়েরা ঘেরাও হতেন, কাউকে কাউকে তুলে নিয়ে যাওয়া ও হয়েছে, ম্যাচ হারলে গালাগালি আছে, ঠিক তেমনি ম্যাচ জিতলে আনন্দের উন্মাদ বহিঃপ্রকাশ ও হয়েছে। সমর্থকদের সেই ভালোবাসা, উন্মাদনা কি টাকা কড়ি দিয়ে কেনা যায়!

ইস্টবেঙ্গলের কট্টর সমর্থক হয়ে বাগান সমর্থকদের আবেগ, ভালোবাসা কে সম্মান করতেই হয়৷ বাবার দাহকার্য শেষ করেই যে সমর্থক মাঠে আসেন বড় ম্যাচ দেখতে, বা বাড়ি বন্ধক রাখা টাকার বান্ডিল নিয়ে যে সমর্থকেরা ক্লাবের দুঃসময়ে পাশে দাড়াতে ছুটে যান, সেই ক্লাবকে ভালোবাসতে না পারলেও সম্মান করতে জানা জরুরী। সেই ভালোবাসার পরিমাণ ঠান্ডাঘরে বসে মাপা হয়ত অসম্ভব।

বাগান কর্তারা প্রধান স্পনসর আনতে কি পারতেন না বা কেন পারলেন না সেই প্রসঙ্গে আসছি না। কিন্তু সেই সব বাগান সমর্থকদের জন্য খারাপ লাগছে যারা বাগান ক্লাব কে মন প্রাণ দিয়ে চিরকাল ভালোবেসেছেন। ময়দান থেকে যে ক্লাবের ঐতিহ্য শুরু, আপামর বাঙালি জনগণের অহংকার যে ক্লাব, এখন তার নিয়ন্ত্রন হবে কতিপয় কর্পোরেটের হাতে, সাজানো বাগান হবে এটলেটিকো দে কোলকাতার দ্বিতীয় দল। ঐতিহ্য আর বাগান সমর্থকদের ভালোবাসাকে পেছনে রেখে, গুটিকয় কর্পোরেট শ্রেণীর লোকজন বাগান সমর্থকদের গাইবেন কর্পোরেটের বাগান প্রেমের কথা, এসব কট্টর ইস্টবেঙ্গল সমর্থক হয়েও মানতে পারছি না। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে বাগান সমর্থকদের মধ্যে ঝড় উঠছে কই?

ঐতিহ্য যে ক্লাবের অংকার, সেই ঐতিহ্য কেড়ে নিলে ঠিক কি পড়ে থাকল?