এনআরসির ফাঁদ কেটে বেরাতে না পেরে, আত্মহত্যার পথই বেছে নিচ্ছেন আসামের অধিকাংশ বাঙালী। আবারও এমন একটি ঘটনার সাক্ষী থাকল গোটা দেশ।
নাগরিকপঞ্জির শেষ খসড়া তালিকাতেও নাম নেই। দিনের পর দিন এক সরকারি দফতর থেকে আরেক সরকারি দফতরে ঘুরতে ঘুরতে হয়রানি, অপমান আর অবসাদের শিকার হয়ে অবশেষে আত্মঘাতী হলেন আরও এক বাঙালী। মৃতের নাম মান্নাস আলি (৬৫)। শোণিতপুর জেলার কামারচুবুরির বাসিন্দা তিনি।
মঙ্গলবার ঘরেই ঝুলন্ত অবস্থায় তাঁর দেহ উদ্ধার করেন পরিবারের সদস্যরা। এই মর্মান্তিক ঘটনার খবর রাষ্ট্র হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে রাজনৈতিক মহল থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়ায়। গোটা দেশজুড়েই তোলপাড় হওয়ার ফলে প্রশাসনিক মহলেও ফুটে ওঠে উদ্বেগের চিহ্ন।
মান্নাস আলির পরিবারের অভিযোগ, ৩০ জুলাই প্রকাশিত দ্বিতীয় খসড়াতেও নাম ছিল না বৃদ্ধ মান্নাসের। নাম না দেখে নিজেকে তালিকাভুক্ত করার জন্য নানা জায়গায় ছোটাছুটি করতে থাকেন তিনি। কিন্তু কোথাও কোনও আশ্বাস মেলেনি। হতাশা গ্রাস করেছিল তাঁকে। ফলে শেষ পর্যন্ত গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হলেন তিনি।
প্রসঙ্গত, প্রথম নাগরিকপঞ্জিতে মান্নাসের পূর্বপুরুষদের নাম রয়েছে, রয়েছে জমিজমার দলিল। এ–সব লেগ্যাসির ভিত্তিতে নিজেকে তালিকাভুক্ত করার জন্য আবেদন করেন মান্নাস। খসড়া থেকে পরিবারের অন্য কোনও সদস্যই বাদ পড়েননি, ডি ভোটার বলেও কেউ চিহ্নিত নন। এনআরসির নৈরাজ্যের শিকার হলেন কেবল মান্নাস।
নাগরিকপঞ্জি তালিকার ভুলভ্রান্তি আর দুঃস্বপ্নকে ঘিরে আসামে বাঙালীর আত্মহত্যার তালিকা ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছে। সোমবার আত্মঘাতী হন কোকরাঝাড় জেলার যুবক সুরেন্দ্রমোহন। এর আগে নিম্ন আসমের আরও দু’জন। গোয়ালপাড়ার ডিটেনশন ক্যাম্পেও রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয় সুব্রত দে’র। আর এবার নাগরিকপঞ্জির তালিকায় ঠাঁই না পেয়ে আত্মহত্যার তালিকায় যুক্ত হল মান্নাসের নাম।