এবার কি তবে শেষ হতে চলেছে আমেরিকার একক ‘দাদাগিরি’? সত্যিই কি গোটা বিশ্বের উপর মার্কিন সামরিক আধিপত্যের অবসান ঘটবে এবার? বদলে শক্তিধর দেশ হিসাবে উঠে আসবে কে? রাশিয়া নাকি চিন? এমন সব প্রশ্নই এখন ঘোরা ফেরা করছে মার্কিন মুলুকে।
এ প্রসঙ্গে সতর্কবার্তা দিয়েছে খোদ মার্কিন কংগ্রেসেরই একটি প্যানেল। যে প্যানেলে শুধু বিরোধী ডেমোক্র্যাট নয়, রয়েছেন খোদ ট্রাম্পের নিজের দলের প্রতিনিধি তথা রিপাবলিকানরাও। এই প্যানেলের মতে, অবিলম্বে প্রতিরক্ষায় বরাদ্দ না বাড়ালে কপালে দুঃখ আছে। ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের প্রাক্তন শীর্ষ কর্তাদের নিয়ে গঠিত এই প্যানেল সরকারের প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে দেখে পরামর্শ দিয়ে থাকে।
প্যানেলের সদস্যরা সম্প্রতি একটি রিপোর্টে আমেরিকার জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতির তীব্র সমালোচনা করে জানায়, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় ভয়ঙ্কর ক্ষতি হচ্ছে। ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলছে মস্কো এবং বেজিং। এমনকি, যে কোনও মুহূর্তে ওয়াশিংটনকে যুদ্ধে হারিয়ে দেওয়ার ক্ষমতাও অর্জন করে ফেলেছে রাশিয়া-চিন।
প্যানেলের রিপোর্ট বলছে, ‘প্রায় সমশক্তির শত্রু, বিশেষ করে রাশিয়া এবং চিনের মতো দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হলে যে দক্ষতা, পরিকল্পনা ও সামরিক শক্তির প্রয়োজন হয়, তার সব ক্ষেত্রেই দুর্বল হয়ে পড়েছে ওয়াশিংটন। আর এই দুই দেশ এবং তাদের কূটনৈতিক বন্ধুরা সর্বদাই পেন্টাগনের দিকে তাক করে বসে আছে।’
২০১১ সাল থেকেই বাজেটে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে বরাদ্দ কমানো, সেনা বাহিনীর সুযোগ সুবিধা কমানোর তুমুল সমালোচনা করেছেন প্যানেলের সদস্যরা। তাঁদের কথায়, ‘একাধিক প্রতিকূল সিদ্ধান্ত অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় সংকট তৈরি করছে। পাশাপাশি ওয়াশিংটনের প্রভাব কমছে এশিয়া-ইওরোপে। ভারসাম্য হারাচ্ছে মার্কিন প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও বাহিনী। দূর্বল হচ্ছে ভূমি, আকাশ ও জলসীমা সুরক্ষা।’
রিপোর্টে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, পরিস্থিতি যে দিকে এগোচ্ছে, তাতে মার্কিন সামরিক সেনাবাহিনীতে অভাবনীয় প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে। ক্ষতি হতে পারে জাতীয় সম্পত্তির। এমনকি রাশিয়া বা চিনের সঙ্গে যুদ্ধ লাগলে হারও হতে পারে মার্কিনদের।
চলতি বছরে যদিও প্রতিরক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ ৭০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা রাশিয়া এবং চিনের প্রতিরক্ষা বাজেটের যোগফলের চেয়েও বেশি। কিন্তু চিন-রাশিয়ার মতো শক্তির সঙ্গে লড়তে গেলে এই পরিমাণও যথেষ্ট নয় বলে দাবি প্যানেলের। কারণ একবিংশ শতাব্দীতে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে মিসাইল, ডুবোজাহাজের মতো সামরিক ক্ষেত্রগুলিতে আর নজরই দেওয়া হয়নি সেভাবে। এর ফলে প্রায় ফাঁপা হয়ে গিয়েছে এই সব ক্ষেত্রগুলি।