ভোরের আলো ফুটতেই রাতের অন্ধকার কাটিয়ে প্রথমভসেই আলোর আভায় রেঙে উঠল আল্পস পর্বতমালা। যার ছটায় বর্ণিল হয়ে উঠল লেক কোমোর জল। ঠিক তখনই সেই লেকের পাড়ে নতুন সেই দিনে নতুন জীবন শুরু করলেন দীপিকা পাড়ুকোন-রণবীর সিং।
সাদা গোলাপ এবং লিলি ফুলে সুসজ্জিত আসর। তার সঙ্গে সামজ্ঞস্য রেখে ঠুমরির মাধ্যমে স্বর্গীয় পরিবেশ গড়ে তুলেছেন শুভা মুদগাল। যার মাঝে ডিজাইনার সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়ের তৈরি করা হাল্কা গোলাপি-সাদা রংয়ের রাজকীয় পোশাক পরে আসর আলো করে বসে আছেন দীপিকা। তাঁর দুই হাতে তখন মেহেন্দির অনবদ্য কারুকার্য ধীরে ধীরে রূপ পাচ্ছে।
কিন্তু হঠাৎই কেঁদে উঠলেন দীপিকা। দু’চোখ বেয়ে নেমে এল জলের ধারা। পাশেই ছিলেন রণবীর। ছুটে এসে কাঁধে হাত রাখলেন নববধূর। সঙ্গীতময় পরিবেশ মূহূর্তে চঞ্চল হয়ে উঠল। সামলে নিয়ে হেসে উঠলেন দীপিকা। মেহেন্দির আসরে আবেগঘন ছোট একটি মুহূর্ত স্মরণীয় হয়ে রয়ে গেল অতিথি-অভ্যাগতদের মনে। ঠিক যেন সিনেমা!
ছ’বছর ধরে যে প্রেম অত্যন্ত গোপনে-সন্তর্পণে ধীরে ধীরে লালিত হয়েছে। বুধবার সদূর ইতালির লেক কোমোর পাশে পরিণয়ের মাধ্যমে তা আরও দৃঢ় হল। গতকাল সকালেই দক্ষিণ ভারতীয় কোঙ্কনি প্রথায় ফুলমুদ্দি হয়ে গেল। সেই প্রথাকে এগিয়ে নিয়ে গিয়ে বিকেলের দিকে হল মূল বিয়ের অনুষ্ঠান।
তবে বিয়ের আসরে বর হিসেবে রণবীরের প্রবেশ ছিল বেশ নাটকীয়, সিনেমার মতোই। সি-প্লেন থেকে নেমে বিয়ের আসরে নিজের সিনেমার একটি গানের সঙ্গে নাচতে নাচতে ঢুকলেন রণবীর। গানটি ছিল ‘গুন্ডে’ ছবির ‘তুনে মারি এন্ট্রি’। যদিও সবটাই হয়েছে লোকচক্ষুর আড়ালে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা যেকোনও রাষ্ট্রনায়কের অনুষ্ঠানকেও হার মানায়। অতিথিদের জন্য বিশেষ রিস্ট ব্যান্ডের ব্যবস্থা ছিল। যার নির্দিষ্ট কোড স্ক্যান করে তবেই বিবাহস্থলে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়েছে।
ভারত থেকে কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে উত্তর ইতালির বিলাসবহুল রিসর্ট ‘ভিলা দেল বলবিয়ানেল্লো’তে দীপিকা-রণবীরের বিয়ের প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই। যে কোনও কারণেই হোক, বিয়ে স্থান এবং সময় গোপন রাখা হয়েছিল। এমনকি বিয়ের অনুষ্ঠানের কোনও ছবি বাইরে যাতে প্রকাশ না পায়, তার জন্য অতিথিদের মোবাইল বন্ধ রাখতেও বলা হয়েছিল।
আগে থেকেই অতিথিদের উদ্দেশ্যে রণবীর-দীপিকার অনুরোধ ছিল, কেউ যাতে কোনও প্রীতি উপহার না আনেন। যদি পারেন, তাহলে দীপিকার মানসিক রোগীদের জন্য গঠিত এনজিওতে দান করুন। রণবীর কাপুরের সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর মানসিক অবসাদে ভুগতে শুরু করেন দীপিকা। দীর্ঘদিন সেই অবস্থায় থাকার পর সুস্থ হন তিনি। তারপরই মানসিক রোগীদের জন্য এনজিও করার ভাবনা মাথায় আসে। উপহারের বদলে সেই এনজিওতে দান করার অনুরোধ করেছেন দীপিকা পাড়ুকোন।
যদিও, মাত্র ৪০ জন নিমন্ত্রিত উপস্থিত ছিলেন সেখানে। সিনেমা জগতের ঘনিষ্ঠদের মধ্যে ছলেন শাহরুখ খান, সঞ্জয় লীলা বনসালি এবং ফারহা খান। প্রসঙ্গত, শাহরুখ খানের ছবি ‘ওম শান্তি ওম’ থেকেই হিন্দি ছবিতে আত্মপ্রকাশ হয় দীপিকার। আর সঞ্জয় লীলা বনসালির ছবি ‘রামলীলা’র সেটেই প্রেমের বন্ধনে জড়িয়ে পড়েন রণবীর-দীপিকা। ২০১৩ সালের ১৫ নভেম্বর মুক্তি পেয়েছিল ‘রামলীলা’। সেই তারিখ স্মরণীয় রাখতেই আজ, ১৫ নভেম্বর শিখ মতে বিয়ে হবে রাম-লীলার।
বুধবার সন্ধ্যায় কোঙ্কনি প্রথায় বিয়ের অনুষ্ঠানের পর আয়োজন করা হয়েছিল রাজকীয় ভুরিভোজের। খাবারের তালিকায় ইডলি-ধোসা যেমন ছিল, তেমনই ছিল সুইজারল্যান্ডের বিখ্যাত পেস্ট্রি। এছাড়া মেনুতে ছিল দীপিকার পছন্দের ডেজার্টও। বিয়ের পর সুসজ্জিত কেকও কাটা হয়। যার নক্সা তৈরি করেছেন ইতালি এবং সুইজারল্যান্ডের কয়েকজন শেফ। বিয়ের আসর জমজমাট রাখতে শুভা মুদগালের পাশাপাশি হাজির ছিলেন গায়ক হর্ষদীপ কাউরও।
শুভ বিবাহের এই ধারা বৃহস্পতিবারও বজায় থাকবে। সিন্ধি মতে বিয়ের জন্য ফের পিঁড়িতে বসবেন দীপিকা-রণবীর। রণবীরের পরিবার পাঞ্জাবি-সিন্ধি। বুধবার দীপিকাদের রীতি মেনে বিয়ে হয়েছে। বৃহস্পতিবার রণবীরের। যেহেতু পাঞ্জাবি বিয়ে, তাই নাচগানার বিরাট বন্দোবস্ত করা হয়েছে। খাবারের তালিকাতেও পাঞ্জাবি ছোঁয়া থাকবে। দীপিকা-রণবীরের বিয়ের রেশ এখানেই শেষ হবে না। দুজনে দেশে ফিরলে, ২১ এবং ২৮ তারিখ প্রথমে বেঙ্গালুরু, পরে মুম্বইয়ে বিরাট সমারোহ করে আয়োজন হবে রিসেশনের। সেখানে পুরো বলিউড নিমন্ত্রিত থাকবে বলে খবর।