১৯১১ সালের ২৯ জুলায়। ব্রিটিশ রাজত্ব যখন গ্রাস করে ফেলেছে গোটা ভারতকে, তখন মৃতপ্রায় ভারতীয়দের নতুন করে উদ্বুদ্ধ করেছিল এগারো জন বাঙালি৷ বিপক্ষে বুট পরা ইস্ট ইয়র্কশায়ার রেজিমেন্টের এগারোজন গোড়া সাহেব। আর এদিকে খালি পায়ে দাঁড়িয়ে বাংলার এগারো। প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করেই ইস্ট ইয়র্কশায়ারকে ২-১ গোলে হারিয়ে আইএফএ শিল্ড জিতেছিল তৎকালীন ‘কালা আদমি’দের দল মোহনবাগান। এবার এই লড়াইয়ের গল্প শোনাতে আগ্রহী বলিউডে। নেপথ্যে বলিউডের ‘মাচো ম্যান’ জন আব্রাহাম।
প্রথম এশিয় ক্লাব হিসেবে আইএফএ শিল্ড জেতার নজির, আবার ফাইনালে ব্রিটিশ দলের বিরুদ্ধে ২-১ গোলে জয়। মোহনবাগানের এই ঐতিহাসিক জয় শুধুমাত্র কোনও ক্লাবের সাফল্যের কাহিনী নয়। এই কাহিনী যেন ক্লাব ছাড়িয়ে আপামর বাঙালির সাফল্যের কাহিনী। এ যেন এক সোনায় লেখা ইতিহাস। স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রত্যক্ষ যোগ না থাকলেও পরোক্ষভাবে স্বাধীনতা সংগ্রামীদেরও উজ্জীবিত করেছিল এই জয়। তাই শুধুমাত্র প্রত্যেক মোহনবাগানির নয়, এই জয় প্রত্যেক বাঙালিরও গর্ব।
এই জয়ের গল্প নিয়ে এর আগে একটি বাংলা ছবিও হয়েছিল। শিবদাস ভাদুড়ি, বিজয়দাস ভাদুড়ি, রেভারেন্ড সুধীর চট্টোপাধ্যায়, অভিলাষ ঘোষদের এই গৌরব গাঁথা নিয়েই পরিচালক অরুণ রায় বানিয়েছিলেন ‘এগারো’। ঐতিহাসিক শিল্ড জয়ের ১০০ বছর উপলক্ষ্যে সেই ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ২০১১ সালে। সেই ছবির বিখ্যাত গান ‘আমাদের সূর্য মেরুন’ এখনও কানে বাজে প্রত্যেক মোহনবাগান সমর্থকেরই। এ বার এই একই গল্প নিয়েই ছবি করতে চান বলিউড অভিনেতা ও প্রযোজক জন আব্রাহাম।
সম্প্রতি এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের অনুষ্ঠানে তাঁকে প্রশ্ন করা হয় ‘লগান’ ছবিটি নিয়ে। সেখানে লগান(কর) ছাড়ের জন্য ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে একটি ক্রিকেট ম্যাচ খেলতে দেখা গিয়েছিল চম্পারনের গ্রামের যুবকদের। কঠিন লড়াই করে ম্যাচ জিতে যাওয়ার পর আর কর দিতে হয়নি তাঁদের। প্রশ্নের উত্তরে জন বলেন, ‘এটা তো ফিকশন। আমি রিয়ালিটি নিয়ে কাজ করতে চাই। ১৯১১ সালে খালি পায়ে বাংলার ক্লাব মোহনবাগান ব্রিটিশ ক্লাব ইস্ট ইয়র্কশায়ারকে হারিয়েছিল। এটা নিয়ে বাংলায় ছবিও হয়েছে। আমিও এই সত্যি ঘটনাটি নিয়ে একটি ছবি করব। আমি চাই এই কঠিন লড়াই ও সাফল্যের কাহিনী সকলের সামনে তুলে ধরতে।’
এর পাশাপাশি তিনি বলেন, তাঁর ইচ্ছে অধিনায়ক শিবদাস ভাদুড়ি’র চরিত্রেই অভিনয় করবেন তিনি। যদিও অভিলাষ ঘোষের চরিত্রও খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং তাঁর পছন্দের। কিন্তু কোন পরিচালক এই ছবি পরিচালনা করবেন সেটা নিয়ে এখনও কিছু বলেননি তিনি। তবে এর আগেও এক সাক্ষাৎকারেও এই ছবিটির প্রসঙ্গ তুলেছিলেন জন। তখন তিনি জানিয়েছিলেন, সুজিত সরকারের উপর পরিচালনার দায়িত্ব তুলে দিয়েছেন তিনি। ফুটবলের প্রতি সুজিতের প্যাশন কারও অজানা নয়। তাই তাকেই যোগ্য মনে করছেন সকলে।
তবে ফুটবলের প্রতি জনের প্যাশনও কোনও অংশে কম নয়।
এখনও নিয়ম করে প্রত্যেক উইকেন্ডে মুম্বই স্পোর্টস এরিনাতে ফুটবল খেলেন তিনি। এমনকি, আইএসএলে উত্তর-পূর্বের সাত রাজ্যকে নিয়ে তৈরি দল নর্থইস্ট ইউনাইটেডের মালিকও তিনি। ফলে এমন একজন ফুটবলপ্রেমী মানুষের মুখে এগারোর কাহিনী নিয়ে ছবি তৈরির কথা শুনে যারপরনাই খুশি সবুজ-মেরুন সমর্থকরা। একই রকম উৎসুক ফুটবলপ্রেমীরাও। ১৯১১-র জয় তো আসলে বাঙালি-সহ গোটা দেশবাসীর জয়, পরাধীনতার দুঃখ থেকে মুক্তির জয়, সর্বোপরি ফুটবলের জয়। তাই এই জয়ের গল্পকে আবারও সেলুলয়েডে দেখার জন্য মুখিয়ে আছে গোটা বাংলা।