কথায় আছে, উদ্দেশ্য মহৎ হলে তার সামনে টেকে না কোনও বাধাই। আবার এ কথাও সত্য যে, ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়। তাই এক মহৎ উদ্দেশ্য এবং অনেকটা সদিচ্ছা নিয়েই এক অভূতপূর্ব অভিযানে নামছেন কলকাতার বাঙালি দম্পতি রথীন্দ্রনাথ দাস ও গীতাঞ্জলি দাস। ১ বছর অর্থাৎ ৩৬৫ দিনে মোট ১৩টি দেশে বাঘ সংরক্ষণের বার্তা দিয়ে বেড়াবেন দুজনে। তাও আবার বাইকে চড়েই!
মাত্র ২জন মানুষ বাইকে চড়ে ৭৫ হাজার কিলোমিটার দূরত্ব পার করা, তাও আবার নেহাৎ ভ্রমণের জন্য নয় বাঘ সংরক্ষণের বার্তা পৌঁছে দিতে। এবার এমনই এক বিরাট কর্মকান্ডের সাক্ষী থাকতে চলেছে বাংলা-সহ গোটা দুনিয়া। জানা গেছে, ভারতের ৫০টি ব্যাঘ্র প্রকল্পের পাশাপাশি বিশ্বের এমন ১২টি দেশে রথীন্দ্রনাথ ও গীতাঞ্জলি বাইক নিয়ে অভিযান করবেন, যেখানে বাঘের বসতি আছে, অথবা যেখানে ব্যাঘ্রকুল প্রায় নিশ্চিহ্ন হতে বসেছে।
চলতি বছরের ডিসেম্বরে শুরু হচ্ছে এই বাঙালি দম্পতির ভারত ভ্রমণ। ৫০ ব্যাঘ্র প্রকল্প এলাকার অন্তত ৫০০টি স্কুলে শিশুদের মধ্যে সচেতনতার প্রসার করতে চান তাঁরা। এই দুই অভিযাত্রীর বক্তব্য, বাঘ বাঁচানোর কথা শুধু মুখেই বলাই হয়। কিন্তু তার জন্য যে ব্যাঘ্র প্রকল্প এলাকা এবং তাদের যাতায়াতের করিডরগুলিকেও বাঁচিয়ে রাখা অত্যন্ত দরকার, সেটা অনেকেই বোঝেন না।
তাই ব্যাঘ্র প্রকল্প সংলগ্ন এলাকাগুলির বাফার জোনে যে সকল মানুষের বাস, তাঁদের আরও সচেতন করা তোলাই প্রধান লক্ষ্য রথীন্দ্রনাথ-গীতাঞ্জলির। এই উপায়েই বাঘ সংরক্ষণ করা যাবে বলে মনে করছেন এই দম্পতি। পাশাপাশি, এই দেশ ছাড়াও গোটা বিশ্বেই বাঘ সংরক্ষণের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। যাকে তাঁরা বলছেন, ‘জার্নি ফর টাইগার’।
১২টি দেশের আবহাওয়া ও পারিপার্শ্বিক সুযোগ-সুবিধার কথা মাথায় রেখে তাঁদের এই জার্নি ফর টাইগারকে মোটামুটি তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন রথীন্দ্রনাথ ও গীতাঞ্জলি। ডিসেম্বর থেকে পরের ৬ মাস দেশের মধ্যে প্রায় ৩০ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়া লক্ষ্য তাঁদের। তারপর সামান্য বিরতি নিয়েই দ্বিতীয় পর্যায়ে মায়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া এবং লাওস যাবেন এই পশুপ্রেমী দম্পতি।
এরপরই শুরু হবে তৃতীয় এবং তুলনামূলক কঠিন পর্যায়। যেখানে তাঁরা যাবেন চিন, রাশিয়া, নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশ। কঠিন এই কারণেই যে রাশিয়ার ঠান্ডায় তাঁদের পাড়ি দিতে হবে ভ্লাদিভস্তক থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গের প্রায় ১৪ হাজার কিলোমিটার পথ। চিনের ক্ষেত্রেও সময় লাগবে প্রায় এক মাস। প্রসঙ্গত, এর আগেও বন্যপ্রাণ ও পরিবেশ বাঁচানোর বার্তা নিয়ে দেশের ২৯ রাজ্যে বাইক চালিয়ে ঘুরেছেন রথীন। কিন্তু সেটা একার ভ্রমণ ছিল। এ বার সঙ্গে যাবেন তাঁর সহধর্মিনীও।
কোথায় থাকবেন, কী খাবেন? এ প্রশ্নের উত্তরে রথীন-গীতাঞ্জলি একসঙ্গে বলেন, ‘দেশের মধ্যে গত কয়েকটি সচেতনতা অভিযানে থাকার ব্যাপারে পরিচিতরা, আমাদের ফেসবুকের বন্ধুরা সাহায্য করেছিলেন। এ বারেও সেই আশ্বাস পেয়েছি। সঙ্গে কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের কাজে যুক্ত সংগঠনের সঙ্গে কথা হয়েছে। তা ছাড়া আমাদের বাইকে তাঁবুর সঙ্গে প্রেশার কুকার, চাল, শুকনো খাবার তো থাকবেই।’ বাঘ বাঁচানোর জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি করার যে মহান উদ্যোগ নিয়েছেন এই বাঙালি দম্পতি, তা রীতিমতো প্রশংসনীয়।