যে কোনও দেশের মুখই হল সে দেশের রাজধানী। ফলে কোনও দেশের রাজধানীই যদি হয় পরিবেশ দূষণের আখরা, তবে গোটা বিশ্বের কাছেই সেই দেশের সম্পর্কে খারাপ বার্তা যায়। বিশ্ব জুড়ে দূষণের পরিমাপকারী সংস্থা এয়ার ভিস্যুয়ালের তালিকায় বৃহস্পতিবার বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর ছিল দিল্লি। ফলে ‘আচ্ছে দিন’-এ আবারও মুখ পুড়ল দেশের।
কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের হিসাবে রাজধানীর বাতাসে দূষণের মাত্রা তীব্র। সরকারি সংস্থা দিল্লি দূষণ নিয়ন্ত্রণ কমিটির ওয়েবসাইট অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার ভোরে দিল্লির বাতাসে বিপজ্জনক ভাসমান কণা পার্টিকুলেট ম্যাটার ২.৫–এর পরিমাণ ছুঁয়েছিল প্রায় ১৪০০–র কাছাকাছি। এই সব কণা নিঃশ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসে গিয়ে রক্তস্রোতে মিশে বিপদ ডেকে আনে।
এয়ার ভিস্যুয়ালের হিসাবে, বুধবার রাতে নিয়ম ভেঙেই যথেচ্ছ বাজি পোড়ানোর জেরে বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ দিল্লির বাতাসের গুণমানের সূচক পৌঁছে যায় ৯৮০–তে। এই সূচক ৫০–এ থাকলে বলা যায় বাতাসে দূষণের মাত্রা নিরাপদ এবং সূচক ৩০০–তে পৌঁছলেই তা বিপজ্জনক। বৃহস্পতিবার সন্ধে সাড়ে ৬টা নাগাদ এই সূচক নেমে আসে ৬২২–এ।
এ বছর দিল্লিতে দূষণের মাত্রা ২০১৭ সালের মতোই। সে বছর বাতাসের গুণমানের সূচক ছুঁয়েছিল ১০০০। অর্থাৎ ২০১৭ সালে দিল্লির বায়ুদূষণের তীব্রতা ছিল বেজিংয়ের চেয়ে ১০ গুণ বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৬ সালের তালিকায় বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের ১০টিই ছিল ভারতে।
গাড়ির ধোঁয়া, রাস্তার ধুলো এবং কয়েক হাজার নির্মাণ ক্ষেত্র থেকে হাওয়ায় উড়ে আসা বালির কণা, এসব কিছুই মিলেমিশে ঘন ধোঁয়াশার চাদরে ঢেকে রাখে দিল্লিকে। সঙ্গে যোগ হয় দীপাবলির সময়ে বাজি পোড়ানোর ধোঁয়া। ফলে ভয়ঙ্কর দূষিত বাতাসের পরিমণ্ডলে থাকতে হয় দিল্লিবাসীকে। শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে এই দূষিত বাতাসের বিষ ফুসফুসে গেলে ছড়ায় ক্যান্সার ও হৃদরোগ।
বায়ুদূষণের কারণে প্রতি বছর এদেশে ১০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়।তা সত্ত্বেও চলতি আর্থিক বছরে দূষণ নিয়ন্ত্রণে বাজেট বরাদ্দ বাড়ায়নি কেন্দ্রীয় সরকার। ২০১৭-১৮ আর্থিক বছরের মতো চলতি আর্থিক বছরেও পরিবেশ মন্ত্রকের বাজেট বরাদ্দ ছিল ২৬৭৫.৪২ কোটি টাকা। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি দিল্লির দূষণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও তা প্রতিরোধে বিশেষ কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানাননি বা বরাদ্দও বাড়াননি। ফলে কেন্দ্র যে এ বিষয়ে উদাসীন, তা নিয়ে আর সন্দেহের অবকাশ নেই।