বাতিল নোট প্রাণ নিয়েছিল ৩ জনের। এর মধ্যে ২ জন দিনহাটার, ১ জন বেহালার বাসিন্দা। নভেম্বর আসলেই তাই আপনজন হারানোর স্মৃতি তাড়া করে বেড়ায় মৃতদের আত্মীয় পরিজনদের। আঁচল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে সবিতা ভৌমিক, সীমা বর্মনরা দোষারোপ করেন কেন্দ্রীয় সরকারের নোটবন্দী সিদ্ধান্তকে।
কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের জেরে প্রাণ গেলেও মোদী সরকার কোনও সাহায্য করেনি বলেই অভিযোগ মৃতদের পরিবারের। যতটুকু যা সাহায্য পেয়েছেন সেটা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দয়া। মোদী সরকারকে দোষারোপ করার পাশপাশি তাই তাঁদের মুখে মমতা বন্দনা।
কোচবিহারের মেখলিগঞ্জে ভূমি সংস্কার দপ্তরের কর্মী ছিলেন বেহালার বাসিন্দা কল্লোল রায়চৌধুরির (৫০)। ২০১৬-র ৩ ডিসেম্বর কোচবিহার থেকে বাড়ি ফেরার পথে ব্যাণ্ডেল স্টেশনে নেমে টাকা তুলতে একটি এটিএম লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। সেখানেই অসুস্থ হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। নোটবন্দির জেরে কল্লোলের মৃত্যু হলেও কেন্দ্রীয় সরকার কোনও সাহায্য করেনি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মৃত কল্লোলের স্ত্রী সীমা রায়চৌধুরি। বলেন, ‘নোটবন্দীশুধু দেশের মানুষের সর্বনাশ করেনি, আমার জীবনটাও বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের জন্য আমার জীবনে চরম দুরবস্থা তৈরি হয়েছে। অথচ কেন্দ্রের কাছ থেকে আমি কোনও সাহায্য পাইনি। যা সাহায্য করেছে রাজ্য সরকার।’ কল্লোলের ছেলে শুভদীপ এখন রামকৃষ্ণ মিশনের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। স্ত্রী সীমাকে বেহালা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরে চাকরি দিয়েছে রাজ্য সরকার।
দিনহাটার গোসানিমারির বাসিন্দা ধনেশ্বর বর্মনের পান-এর ব্যবসা ছিল। নোটবন্দির জেরে বাতিল টাকা জমা দিতে তাঁকে যেতে হত স্থানীয় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে। একদিন টাকা জমা দিতে ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়ে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর। সিভিক পুলিশ ছেলের আয়ে এখন তাঁদের সংসার চলে। মৃত পান ব্যবসায়ীর স্ত্রী বলেন, ‘টাকা জমা দেওয়ার লাইনে দাঁড়িয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন স্বামী। স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে উদ্ধার করে দিনহাটা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। কেন্দ্রীয় সরকারের নোটবন্দী সিদ্ধান্তের জন্য আমার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে।’
দু’বছর আগে বাতিল নোট জমা দিতে স্থানীয় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সামনে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন দিনহাটার ধরণিকান্ত ভৌমিক। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন সাতকুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। প্রায় লক্ষাধিক টাকার নোট বাতিল হয়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় তাঁর নাওয়া-খাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। মানসিক চাপের মধ্যে ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে দিনহাটা হাসপাতালে, পরে কোচবিহারের নার্সিংহোমে তাঁর মৃত্যু হয়। স্ত্রী সবিতা বলেন, ‘আচমকা নোট বাতিলের খবরে দুশ্চিন্তায় ভুগছিলেন তিনি। বাড়িতে জমানো লক্ষাধিক টাকা কী করে ব্যাঙ্কে জমা দেবেন, সেই চিন্তায় সময়মতো খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন। রাতে ঘুমাতেনও না’।