কালো টাকা ফুরোল না। মানুষের দুর্দিনের নটে গাছটিও মুড়োল না। মাঝখান থেকে ২ বছর কেটে গেল। বিরোধীদের অধিকাংশই নোটবন্দী মেনে নিতে পারেনি। সর্বাগ্রে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নেতৃত্বে সারা দেশ জুড়ে নোট বাতিলের প্রতিবাদে পথে নেমেছিলেন সাধারণ মানুষ।
নোট বাতিলের ঘোষণার প্রথম থেকে মমতাই ছিলেন বিরোধিতার মুখ। ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার এক ঘণ্টার মধ্যে তাঁর পদত্যাগ দাবি করে টুইট করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লিখেছিলেন, ‘টিভি চ্যানেল বন্ধ করার ফতোয়া দিয়ে আগে রাজনৈতিক জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছিল। এ বার আর্থিক জরুরি অবস্থা জারি হল’।
নোটবন্দীর প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতির কাছে যাওয়া থেকে শুরু করে রাজধানীতে মিছিল করে ৩ দিনের সময়সীমা দেওয়া – সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সবার আগে পথে নেমেছিলেন মমতা। শহরের প্রধান প্রধান ব্যাঙ্কের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। মমতাকে পাশে পেয়ে সাধারণ মানুষ গলা তুলেছেন, নিজেদের টাকা ফেরত চাই।
মমতা মনে করেন, এটা নরেন্দ্র মোদী সরকারের হঠকারী সিদ্ধান্ত। যে সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়বেন সাধারণ ও গরিব মানুষ, কর্মচারী, বিভিন্ন ছোট ব্যবসায়ী। সেই মুহূর্তে বলেছিলেন, ‘আমি অর্থনীতি বিশেষ বুঝি না। কিন্তু সাধারণ মানুষ হিসেবে পরিস্থিতিটা বুঝতে পারছি। ব্যাঙ্ক খুচরো টাকা দেয় না। দেয় ৫০০ টাকার নোট। দায়িত্ব নিয়ে বলছি, আজ ব্যাঙ্ক থেকে ৫০ হাজার টাকা তুলেছি আমার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকে। আমায় কিন্তু ব্যাঙ্ক সব ৫০০ টাকার নোট দিয়েছে। আমি যদি কাল সকালে দোকানে কিছু কিনতে যাই, খাবার জিনিস কিনতে হয়, যদি গাড়ি ভাড়া দিতে হয় — আমি দেব কী করে?’ এক বছর পরে অর্থাৎ নোট বাতিলের প্রথম বর্ষপূর্তির সময় মমতার তোলা সেই প্রশ্নেই সীলমোহর দিয়ে অর্থনীতিবিদেরা বলেছিলেন, ‘যথেষ্ট চিন্তা-ভাবনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়ে সাধারণ মানুষের কথা ভাবা হয়নি’।
একের পর এক টুইট করে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে প্রশ্নবাণ ছুঁড়ে দেন মমতা। দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে লিখেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চাই আমার দরিদ্র ভাই-বোনেরা, ছোট ও ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা কীভাবে তাঁদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনবেন’? নোটবন্দীর ফলে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস হচ্ছে অভিযোগ করে মমতা টুইটে লেখেন, ‘কালো টাকা ফিরিয়ে আনার নামে দেশের অর্থনীতিতে টালমাটাল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে’। তাঁর কথায়, ‘টোটাল ক্যাওস’। ২০০০ টাকার বেশী এটিএম থেকে তোলা যাচ্ছে না। আবার ব্যাঙ্কেও টাকার যোগান নেই। সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের হয়রানি, কৃষক, মজুরদের অভাব নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যাঙ্কে পর্যাপ্ত ১০০ টাকার যোগান নেই। কীভাবে সাধারণ মানুষ, দরিদ্র কৃষক, চাকুরিজীবি মধ্যবিত্ত, মজুর তাঁদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনবেন’?
নোট বাতিলের প্রথম বর্ষপূর্তির একদিন আগেই প্রতিবাদ জানিয়েছেন স্যোশাল মিডিয়ায়। নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টটিতে ছবির বদলে কালো করে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, নোট বাতিল একটা বিপর্যয়। এটা অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে সকলকেই টুইটারের ডিপি কালো করার আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি। নোটবন্দীর দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতেও কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন লঘু করননি মমতা। আজও বৃহস্পতিবারও টুইট করে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন। ৮ নভেম্বরকে ‘কালা দিবস’ চিহ্নিত করে মুখ্যমন্ত্রী টুইটে লেখেন, ‘বিমুদ্রাকরনের নামে কেন্দ্রীয় সরকার দেশের মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে নোটবন্দী। এই দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে পারে দেশবাসী’।