গরম কফি, ঠান্ডা পানীয় বা স্ন্যাকস্ সহযোগে ২৫ মিটার উচ্চতা থেকে নিউ টাউনের ‘টপ ভিউ।’ ৩৮ মিলিমিটারের ল্যামিনেটেড কাচে ঘেরা বৃত্তের বাইরে দিগন্তবিস্তৃত খোলা আকাশ। নিচে চোখ পড়লেই এঁকেবেঁকে যাওয়া উড়ালপুল, সাজানো–গোছানো রাস্তাঘাট, আর পরিকল্পিত ভাবে লাগানো গাছগাছালি। একেবারে ছবির মতো।
পুরোটাই কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। ন্যূনতম টিকিটে এক ঘণ্টার জন্য একসঙ্গে থাকতে পারবেন ৮০–৯০ জন। ভিতরে রয়েছে ক্যাফেটেরিয়া, রেস্তোরাঁ, কিউরিও শপ, গ্যালারি ও ভিআইপি লাউঞ্জ। ৪ মিটার চওড়া বৃত্তের ভিতরের দেওয়ালে আঁকা হয়েছে বাংলার বিভিন্ন বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান ও মনীষীদের ছবি। রাখা হয়েছে আরামদায়ক সুদৃশ্য চেয়ার–টেবিল। খোলা হয়েছে রিশেপশনও।
মাসখানেকের মধ্যেই চালু হয়ে যাবে নিউ টাউনের দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্য বিশ্ববাংলা গেট। কাজ সম্পূর্ণ শেষ। পুরোটাই ইস্পাতে তৈরি গেটটির প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার ক্ষমতা যাচাইয়ে রাইট্স–কে দায়িত্ব দিয়েছিল হিডকো। ইতিমধ্যেই প্রয়োজনীয় পরীক্ষা– নিরীক্ষা করে গেট চালুর বিষয়ে ছাড়পত্র দিয়েছে রাইটস। তবে গেটের স্তম্ভগুলিতে নজরদারি আরও বাড়ানোর শর্তও দিয়েছে তাঁরা।
সেইমতো বাইরে লাগানো হয়েছে ১৬টি সিসি ক্যামেরা। ভিতরে রয়েছে ২৪টি। মোট ৪০টি সিসি ক্যামেরায় সব সময় মনিটরিং করা হচ্ছে।
অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাও জোরদার। দমকলকর্মীরা যাতে জলের সমস্যায় না পড়েন, তাই গেট সংলগ্ন এলাকাতেই করা হয়েছে বিরাট জলাধার। নিরাপত্তায় থাকবে বিধাননগর পুলিস। পাশাপাশি বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষীদেরও নিয়োগ করা হতে পারে। লাগেজ, প্লাস্টিক ব্যাগ, জলের বোতল, সিগারেট, দেশলাই, লাইটার নিয়ে ওঠা যাবে না বিশ্ব বাংলা গেটে। মোবাইলে সেলফি, ছবি তোলায় অবশ্য কোনও বাধা নেই। তবে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারের জন্য ছবি তুলতে অনুমতি নিতে হবে। প্রথম দর্শনার্থী দল নেমে এলে পরবর্তী দলকে ওঠানো হবে। ততক্ষণ অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থেকে পা ব্যথা হওয়ার কোনও প্রশ্ন নেই। গেটের নিচে টিকিট কাউন্টারের পাশের করা হয়েছে ‘ওয়েটিং লাউঞ্জ।’ সেখানে রয়েছে বসার ব্যবস্থা, পানীয় জল, শৌচাগার।
বিশ্ববাংলা গেটে উঠে দেখার আগ্রহ নিয়ে অনেকদিন ধরেই অপেক্ষায় রয়েছেন শহরবাসী। বিদেশিরাও দূর থেকে দেখে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। অনেকেই টিকিট কাউন্টারে এসে কবে খুলবে জানতে চাইছেন। সুতরাং, চালু হওয়ার পর দর্শনার্থীদের চাপ যে বাড়বে তা এখন থেকেই আঁচ করতে পারছেন হিডকোর আধিকারিকরা। তাই জোরকদমে চলছে ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত কাজ।
হিডকোর জেনারেল ম্যানেজার সুমন নিয়োগী জানালেন, ২০০ মিটারের বৃত্তাকার গেটের বাইরের দেওয়ালে রয়েছে বিশেষ ধরনের ত্রিস্তরীয় ‘ল্যামিনেট গ্লাস’। দুটি কাচের স্তরের মাঝখানে রয়েছে ‘পিভিসি।’ ভিতরের ঠান্ডা ও বাইরের সূর্যের প্রখর তাপে এই কাঁচের কোনও ক্ষতি হবে না। ওঠার সময় প্রত্যেক দর্শনার্থীকে একটি করে টোকেন দেওয়া হবে। সেই টোকেন নিয়ে ঢুকতে ও বেরতে হবে। অনলাইনেও টিকিট কাটার ব্যবস্থা করা হবে। গেটের স্বতন্ত্র ডিজাইন ইতিমধ্যেই দেশ–বিদেশের লোকজনের নজর কেড়েছে। প্রায় ২০০টি ডিজাইন বাতিল হওয়ার পর এই ডিজাইনটি ঠিক করা হয়।
ঝড় বা ভূমিকম্পের দাপট কতটা সইতে পারবে এই স্থাপত্য? সুমনবাবু জানালেন, আইআইটি কানপুরের ‘এয়ারোস্পেস’ ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ গেটের মডেল তৈরি করে পরীক্ষা–নিরীক্ষা করেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, বড় ঝড় হলেও নিরাপদ থাকবে গেট। ভূমিকম্পের জন্য মাটি পরীক্ষা করা হয়েছে। সেইমতো প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। ৮ জন মানুষ বহনকারী দুটি লিফ্ট তৈরি করা হয়েছে দর্শনার্থীদের ওঠা–নামার জন্য। আপৎকালীন পরিস্থিতির জন্য দু’দিকে রয়েছে সিঁড়ি।
(সংগৃহীত)