এতদিন যে কোনও সামাজিক অনুষ্ঠানেই প্রায় ব্রাত্য ছিল ওঁরা। কালীপুজো মানেই আলোর উৎসব। তবু এত আলোর মাঝেও ভাইফোঁটা এলে ওঁদের মুখে নেমে আসত মন খারাপের আঁধার। আসলে ভাইকে ফোঁটা দেওয়ার ইচ্ছে হত অনেকেরই। কিন্তু পরিবার ও সমাজ কখনই সেই ইচ্ছেয় সায় দেয়নি।
তবে এবার সেই ইচ্ছেপূরণ হচ্ছে ওঁদের। ‘সংবেদন’ নামে উত্তর কলকাতার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে এই প্রথমবার রূপান্তরিত ও রূপান্তরকামীরা ভাইফোঁটা দিচ্ছেন, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘বোনফোঁটা।’
বহুদিন ধরেই শারীরিক ও মানসিক হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে রূপান্তরিত ও রূপান্তরকামীদের। শুধু উপহাসেই শেষ নয়, তার সঙ্গে সেঁটে দেওয়া হয়েছে মেয়েলি তকমা। আসলে এখনও সমাজের কাছে ‘অস্বাভাবিক’ অস্তিত্ব নিয়েই বেঁচে আছেন বহু রূপান্তরিত ও রূপান্তরকামী মানুষ।
যদিও চলতি বছরেই সমকামিতা নিয়ে রায় দিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। সেই রায়ের পরেও সামাজিক পরিস্থিতি ও মানসিকতা খুব-একটা বদলায়নি। তবে লড়াই চালিয়ে যেতে চান সকলে। আগামী ৮ নভেম্বর দুপুর ১২টায় বাগবাজার রিডিং লাইব্রেরি চত্বরে ‘বোনফোঁটা’র আয়োজন করা হয়েছে।
এই বোনফোঁটার প্রয়াস শুধু রূপান্তরকামীদের মূলস্রোতে ফেরানোর চেষ্টা নয়, সমাজের পিছিয়ে পড়া সমস্ত মানুষের প্রতি স্বীকৃতি। এ কথা জানালেন খোদ ‘সংবেদনে’র সম্পাদক সমিত দাস। তিনি বলেন, ‘প্রথমবার রূপান্তরকামীরা ভাইদের ফোঁটা দেবেন। অর্থাৎ ওঁরা প্রথমবার বোন হিসেবে ফোঁটা দিচ্ছেন। তাই ওঁদের বোন হিসেবে প্রাধান্য দিতেই বোনফোঁটা বলা হচ্ছে।
জানা গেছে, দেশের প্রথম রূপান্তরকামী আইনজীবী মেঘ সায়ন্তন ঘোষ ছাড়াও আরও অনেকেই থাকছেন এই অনুষ্ঠানে। যাঁরা এখনও রূপান্তরকামী হননি, তাঁরাও ফোঁটা দেবেন। ফোঁটা নেবে সংস্থার শিশুরা। থাকবে বিশেষ ভাবে সক্ষম শিশুরাও।