কালীপুজো মানেই শক্তির উৎসব। অন্ধকার ঘুচিয়ে আলোয় উত্তরণ। এই আলোর উৎসবই তো দীপাবলি। ভূত চতুর্দশীর সন্ধ্যায় বাড়ি সাজানো হয় মাটির প্রদীপ দিয়ে। রাতের অন্ধকারে মাটির প্রদীপের আলো তৈরি করে মায়াবী পরিবেশ। পাশাপাশি, প্রদীপকে সঙ্গ দেয় মোমবাতিও। কিন্তু এখন এলইডি আলোর ধাক্কায় মাটির প্রদীপ, মোমবাতি ব্রাত্য। মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন গ্রামে মাটির প্রদীপ তৈরি করার কারিগররা আজ বিপন্ন।
বহরমপুর থেকে ১০–১২ কিমি দূরের পালপাড়া ছিল মাটির সামগ্রী তৈরির বিখ্যাত গ্রাম। কালীমূর্তি তৈরি ছাড়াও কালীপুজোর সময় মাটির প্রদীপ তৈরির জন্য স্নান–খাওয়ার সময় পেতেন না সেখানকার শিল্পীরা। তৈরি হত একমুখী প্রদীপ, দুমুখো প্রদীপ, তিনমুখ, পঞ্চমুখ প্রদীপ। এছাড়াও নানা ধরনের ডিজাইনের প্রদীপ। একই ছবি ছিল কর্ণসুবর্ণ, কাঁঠালিয়া, কান্দি মহকুমার বিভিন্ন গ্রামে। সব গ্রামেই ছিল পালেদের বসবাস।
এই মাটির প্রদীপ তৈরির কারিগররা প্রথম ধাক্কাটা খেলেন কয়েক বছর আগে চীনা আলো বাজারে আসায়। আর গত বছর থেকে এলইডি আলো বাজারে আসায় মাটির প্রদীপ শিল্পে লেগেছে চরম ধাক্কা। কান্দির দোহালিয়া পালপাড়ায় ৫০টি পরিবারের অনেকেই মাটির প্রদীপ তৈরির কাজ ছেড়ে দিয়েছেন। সংসার চালাতে কেউ করছেন রাজমিস্ত্রির কাজ, কেউ–বা মাঠে মজুরের কাজ করেন।
বহরমপুরের পালপাড়ায় এবার মাটির প্রদীপ তৈরি হলেও সংখ্যায় খুব কম। অর্ডার তেমন নেই বললেই চলে। মাটির প্রদীপের মতো একই হাল মোমবাতির। মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জের মোমবাতি কারখানাগুলিতে কালীপুজোর সময় মোমবাতি নেওয়ার জন্য লাইন পড়ে যেত। তবে এখন মোমবাতির বাজারও খুবই খারাপ। চাহিদা নেই বললেই চলে।
ইদানীং কালীপুজোর রাতে এলইডির আলোই জ্বলে সারারাত ধরে। সেই আলোর ঝলকানিতেই বছর বছর চাপা পড়ে যাচ্ছে বহু মাটির প্রদীপ, মোমবাতি তৈরির কারিগর। দীপাবলি আর দীপাবলি নেই। বগত কয়েক বছরেই তা ‘এলইডিবলি’ হয়ে গেছে।