এখন আর দুর্গাপুজোতেই থেমে নেই থিমের বাহার। শারদ্যোৎসবের গন্ডি পেরিয়ে থিমের দৌরাত্ম্য চলছে শক্তির আরাধনাতেও। ইদানীং কালীপুজোতেও উঠে আসছে নিত্যনতুন থিম। শহর কলকাতার গণ্ডি ছাড়িয়ে থিমের ছোঁয়া লেগেছে শহরতলির কালীপুজোগুলিতেও। বিগত বছরের মতো এবারও নজরকাড়া বেশ কয়েকটি মণ্ডপ হয়েছে রাজারহাটে। গোপালপুর পার্থনগরীতে আকাশে এবার তারার বদলে ফুটে উঠবে রঙিন আলপনা আর নানা ধরনের ছবি। নেতাজি সঙ্ঘের পুজোয় তারামণ্ডলের আদলে মণ্ডপ গড়ে রঙের ওই খেলা দেখাচ্ছেন শিল্পী শিবশঙ্কর দাস। বাইরে থেকে এই মণ্ডপের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া কঠিন। বিশাল এক ভাস্কর্যের মধ্য দিয়ে ঢুকে সুড়ঙ্গপথ পেরিয়ে রঙিন আলোয় সাজা এই আকাশের দেখা পাবেন দর্শকেরা। মাথার ওপর বিস্তীর্ণ আকাশ ভরে আছে রঙিন আলপনা, ছোটদের মনপছন্দ ছবিতে। ফ্লুরোসেন্ট রং ব্যবহার করে আলোর এই কেরামতি দেখিয়েছেন শিল্পী। মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ বেড়েছে। কিন্তু পরিচিতের সংখ্যা যত বাড়ছে, সম্পর্কের বাঁধন ততই আলগা হচ্ছে। এই ভাবনায় কালীঘাট নতুন সঙ্ঘে মণ্ডপ গড়েছেন শিল্পী রূপক বসু। পেরেক আর সুতোয় মডেল গড়ে মানুষের সঙ্গে মানুষের, দূষণের জন্য মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির চিড় ধরা সম্পর্কগুলো দেখানো হয়েছে। জালে ঢাকা মণ্ডপে। জাল কেটে বের হয়ে আসার চেষ্টা করে ব্যর্থ হচ্ছে মানুষ। আবার যে কোনও প্রাণীর মতো ভগবানকেও জন্ম–মৃত্যুর আবর্তের মধ্য দিয়ে যেতে হয়— পূর্ব সিঁথির মিলিটারি ক্যাম্পে অন্তহীন প্রাণ ভাবনায় মণ্ডপ গড়েছেন মলয়–শুভময় শিল্পী জুটি। সেন্ট্রাল দমদম স্পোর্টিং ইউনিয়ন ও মিলন সঙ্ঘ যৌথভাবে এবার কালীপুজোর আয়োজন করেছে। জগন্নাথদেবের সৃষ্টি নিয়ে পৌরাণিক কাহিনীকে সামনে রেখে প্রাণের সৃষ্টি তুলে ধরা হয়েছে এখানে। প্রাণের জন্মের জন্য মায়ের প্রয়োজন— তা বোঝাতে অসংখ্য শাড়ি ব্যবহার করা হয়েছে মণ্ডপটিতে। এছাড়াও কোথাও মা সারদাকে সামনে রেখে নারীর শান্ত রূপ তুলে ধরা হয়েছে। কোথাও আবার মণ্ডপ জুড়ে শান্তির পরিবেশ। কোনও কোনও পুজোয় আবার প্রতিবাদ জানানো হয়েছে জীব ও সবুজ ধ্বংসের বিরুদ্ধে। আবার জাত–ধর্মের হানাহানিতে ভুলতে বসা মানবিকতার ছবি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে কিছু পুজোর থিমে। এভাবেই থিমের ছোঁয়ায় বর্ণময় হয়ে উঠেছে গোটা শহর ও শহরতলি।