প্রথমে সিবিআই ডিরেক্টর অলোক বর্মা মোদী সরকারের দিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়লেন। রাকেশ আস্থানা প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন জেনেও তাঁর নামে ঘুষের মামলা ঠুকলেন। তারপর রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ডেপুটি গভর্নর বিরল আচার্য প্রকাশ্যে সরকারের নাক গলানোর সমালোচনা করলেন। এবার সিবিআইয়ের ডিএসপি, এএসপি স্তরের অফিসাররাও আস্থানার বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করে কার্যত প্রধানমন্ত্রীর দিকেই আঙুল তুলছেন।
এদিকে, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাজে মোদী সরকার কীভাবে হস্তক্ষেপ করেছে, সেই তথ্য সংবাদমাধ্যমে লাগাতার ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। ডেপুটি গভর্নর বিরল আচার্য মুখ খোলায় খোদ প্রধানমন্ত্রী অখুশি বলে অর্থ মন্ত্রক সূত্রে বারবার বার্তা দেওয়া হয়েছিল। তার পরেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন বিরল।
এখন প্রশ্ন, তাহলে কি নরেন্দ্র মোদীর বজ্রমুষ্টি আলগা হচ্ছে? সরকার ও প্রশাসনে প্রধানমন্ত্রীর কর্তৃত্ব কি কমছে? পরপর ঘটনাপ্রবাহ দেখে এমন সব প্রশ্নই উঠতে শুরু করেছে রাজধানীর আনাচকানাচে।
মনমোহন জমানার একেবারে শেষ পর্বে বিভিন্ন মন্ত্রক, দফতরের মধ্যে নিয়মিত বিবাদ বাধত। এক দফতর আর এক দফতরের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকত। সে সময় মোদীই তার কড়া সমালোচনা করতেন। ২০১৩ থেকে বিজেপি নীতিপঙ্গুত্বর কথা তুলে প্রচারে নামে। তার পরে প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসে মোদী প্রথমেই কড়া সুরে সরকারের ঘরের বিবাদ ঘরেই মিটিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন সেই মোদী সরকারেরই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা একই প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ব্যক্তির মধ্যে বিবাদ বেধেছে। ইডি-র অফিসার রাজেশ্বর সিংহ মোদীরই আস্থাভাজন গুজরাতি অফিসার হাসমুখ আঢিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতিতে প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। সিবিআই ডিরেক্টরের দেহরক্ষীরা রাজপথে ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর গোয়েন্দাদের কলার ধরে টানাটানি করছেন।
কংগ্রেস নেতারা বলছেন, মনমোহন সরকার ন’বছর ক্ষমতায় থাকার পর যে রোগ ধরেছিল, মোদী সরকারের সাড়ে চার বছরেই সেই রোগ ধরেছে। মনীশ তিওয়ারির দাবি, ‘এঁরা আমাদের নীতিপঙ্গুত্বের কথা বলতেন! কারও যদি নীতিগত পঙ্গুত্ব থাকে, তা হলে সেটা মোদী সরকারের।
সমালোচনাটা আরও বেশি হচ্ছে, কারণ সিবিআই ডিরেক্টর অলোক বর্মা বা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর উর্জিত পটেল, দু’জনেই মোদীর নিযুক্ত। অনেকেই বলাবলি করছেন, অনেক দিন ধরেই ক্ষোভ জমছিল। তার বড় কারণ, এই আমলে প্রশাসনের শীর্ষ পদগুলির অনেকাংশ দখল করেছেন গুজরাত ক্যাডারের অফিসাররা। অথচ আমলাদের মধ্যে গুজরাত ক্যাডারের সংখ্যা ৪ শতাংশের বেশি নয়। আইপিএস-দের মধ্যে এমন অনেকে ক্ষমতা পেয়েছেন, যাঁরা এর আগে গুজরাত দাঙ্গা, ইশরাত জহান মামলা, সোহরাবুদ্দিন মামলায় বিজেপির সরকারকে সাহায্য করেছেন। অন্যদের অনেকেই এই ‘পুরস্কারনীতি’ ভাল চোখে দেখেননি।
অবশ্য বিজেপি মুখপাত্রদের দাবি, এসবই নেতিবাচক প্রচার। এসবে কোনও লাভ হবে না। মানুষ মোদীর কাজে সন্তুষ্ট।