১৮২ মিটার উচ্চতার সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের আকাশচুম্বী মূর্তির বিশেষত্বের শেষ নেই। গুজরাতের কেওড়িয়াতে নর্মদা নদীর উপর বসানো এই মূর্তিটি বানিয়েছেন ৯৩ বছর বয়সী স্থাপত্য শিল্পী রামবন সুতার। খরচ হয়েছে ২৯৯০ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রায় ৩০০০ কোটি টাকা। বলা হচ্ছে, স্ট্যাচু অব লিবার্টি-র দ্বিগুণ উঁচু প্যাটেলের এই মূর্তি বিশ্বের সবচেয়ে উচ্চতম মূর্তি।
কিন্তু এই মূর্তি ঘিরে উঠছে হাজারো প্রশ্ন। ভারতের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে বিপুল টাকা ব্যয়ে প্যাটেলের মূর্তি বানানো কি আদৌ শোভা পায়? স্বাধীনতার ৭২বছর পরেও যে দেশে ঋণের দায়ে কৃষক আত্মহত্যা করে সেই দেশে ২৯৯০ কোটি টাকা খরচ করে মূর্তি বানানো কতটা যুক্তিযুক্ত? এ শ্রদ্ধার্ঘ্য না-কি অপব্যয়?
মূর্তি তৈরির এই ৩০০০ কোটি টাকায় কী কী করা যেতে পারত? দেখে নেওয়া যাক।
কৃষি ক্ষেত্রের ভোল বদলে ফেলা যেত এই টাকায়। ভারতের মতো কৃষি প্রধান দেশে এর চেয়ে ভালো বোধহয় আর কিছু হত না। হতে পারত প্রায় ৪০,১৯২ হেক্টর জমিতে সেচের কাজ। ১৬২টি ছোট সেচ প্রকল্প মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ সম্ভব হত। তৈরি করা যেত ৪২৫টি ছোট বাঁধ। কৃষকদের আর ঋণের বোঝা ঘাড়ে আত্মহত্যা করতে হত না।
ঢেলে সাজানো যেত শিক্ষা ক্ষেত্র। বানানো যেত ২ টি নতুন আইআইটি ক্যাম্পাস। একটা আইআইটি তৈরির খরচ প্রায় ১১৬৭ কোটি টাকা। কিংবা বানানো যেত দু’টি অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সের (এইমস) ক্যাম্পাস। কারণ একটি ‘এইমস’ তৈরির খরচ প্রায় ১১০৩ কোটি টাকা। একটি আইআইএম ক্যাম্পাস তৈরির খরচ প্রায় ৫৩৯ কোটি টাকা। মূর্তি বানানোর টাকায় পাঁচটি নতুন আইআইএম ক্যাম্পাস তৈরি করা যেত এই টাকায়।
অপ্রচলিত শক্তির ক্ষেত্রে আনা যেতে পারত জোয়ার। ৭৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পাঁচটি নতুন সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি করা যেত এই টাকা দিয়ে। যেখানে একটি তৈরিতে খরচ প্রায় ৫২৮ কোটি টাকা।
অভাবনীয় উন্নতি করা যেত মহাকাশ গবেষণায়। মূর্তি তৈরির এই খরচ ছয়টি মঙ্গল অভিযানের খরচের সমান। একটি অভিযানের খরচ প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা। একটি চন্দ্রাভিযানের খরচ মোটামুটি ৮০০ কোটি টাকা। তাই অনায়াসে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর অধীনে তিনটি চন্দ্রাভিযানও করা যেত এই মূর্তি তৈরির টাকায়।
সে সবের বদলে ২৯৯০ কোটি টাকা ঢালা হল তামা, জিঙ্ক, সীসা, টিনের পেছনে। এর থেকে বড় পরিহাস আর কী হতে পারে?