‘বাংলা কোনওদিন কারও কাছে মাথা নোয়ায় নি। ভবিষ্যতেও বাংলা কারও কাছে মাথা নোয়াবে না’। কোচবিহারের রাসমেলা ময়দানে পরিষেবা প্রদান ও একগুচ্ছ সরকারি প্রকল্পের শিলান্যাসের অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে জনসমুদ্রের মধ্যে দাঁড়িয়ে এভাবেই এনআরসি প্রসঙ্গে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে তুলোধোনা করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এনআরসিকে কেন্দ্র করে আসামে একের পর এক বাঙালির আত্মহত্যা প্রসঙ্গে উদ্বেগ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘এনআরসিতে স্ত্রী বা সন্তানের নাম থাকলেও স্বামীর নাম নেই। বাধ্য হয়েই হতাশা থেকে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। বাংলায় এরকম হয় না। মনে রাখতে হবে মানুষের নাগরিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, গণতান্ত্রিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক অধিকার আছে’। তাঁর কথায়, ‘আসামে বাঙালি খেদাও আর গুজরাটে বিহারি খেদাও চলবে না। বাংলায় এ জিনিস কখনই হবে না। বাংলা আদিবাসী, অসমীয়া, বিহারি, উদ্বাস্তু, তফসিলি, সংখ্যালঘু, নেপালি, উর্দুভাষী সকলকে ভালবাসে। বিজেপিকে বিঁধে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘যারা হিন্দু–মুসলমানকে নিয়ে রাজনীতি করে, তফসিলি ও আদিবাসীদের ধ্বংস করে রাজনীতি করে যারা তাদের বলি, ভাগাভাগি করবেন না।’
কেন্দ্রের ‘বেটি বাঁচাও-বেটি পড়াও’ প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রীর কটাক্ষ, ‘সারা দেশে এই প্রকল্পের ব্যয় ১০০ কোটি টাকা ধরা হয়েছে, যা কিনা বিজ্ঞাপনেই খরচ হচ্ছে। অথচ পশ্চিমবঙ্গ এক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই সাত-আট হাজার কোটি টাকা খরচ করে ফেলেছে।’ কোচবিহারের জন্য রাজবংশী অ্যাকাডেমি, কামতাপুরি ভাষা অ্যাকাডেমি করার কথাও জানান তিনি। অন্যদিকে কোচবিহারের ঐতিহাসিক মদনমোহন বাড়ি পরিদর্শনে গিয়ে আবাসিকদের থাকার পরিকাঠামো নির্মাণে পর্যটন দপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। মমতার কথায়, ‘বাংলাকে অনুসরণ করতে হবে, বাংলা কারও পরোয়া করে না।’
এদিনের সভা থেকে উন্নয়নের প্রশ্নেও বাংলার সাফল্য তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। একশো দিনের কাজে কোচবিহার দেশের মধ্যে সেরা হয়েছে। রায়ডাক নদীর ওপর নতুন সেতুর শিলান্যাস করা হয়েছে। স্বাধীনতার পর এই প্রথম রাজ্য সরকার উদ্যোগী হয়ে ছিটমহল সমস্যার সমাধান করেছে, আশাকর্মী, সিভিক ভলান্টিয়ারদের বেতন বাড়ানো হয়েছে, কৃষক পেনশন, কণ্যাশ্রীর টাকা বাড়ানো হয়েছে। তফসিলি, আদিবাসীদের জন্য শিক্ষা-উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। লোকশিল্পীদের ভাতার ব্যবস্থা, ৩৩ লক্ষ সংখ্যালঘু স্কলারশিপ দেওয়া হয়েছে। রাজ্যে ৪৬টি কলেজ গড়ার কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিনের সভায় বিজয়চন্দ্র বর্মনের রাজবংশী ভাষার অভিধানের প্রথম খণ্ড ও একটি পত্রিকা মুখ্যমন্ত্রীর হাতে তুলে দেওয়া হয়।