ঘরের ছেলে তো আপনই হয়। ঘরশত্রু হয় বিভীষণরা। তাই কি এক দুর্নীতির ঘটনায় অভিযুক্তরা নিজেদের মধ্যে ফোনে কথাবার্তার সময়ে সিবিআইয়ের বিশেষ অধিকর্তা রাকেশ আস্থানা সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন – ‘আস্থানা তো আপনা আদমি হ্যায়’? আজ সিবিআইয়ের ডেপুটি পুলিশ সুপার অজয় কুমার বাসসি এই পুরো ঘটনাটি জানান শীর্ষ আদালতের কাছে। আস্থানার বিরুদ্ধে অভিযোগও করেন তিনি।
বাসসির এই অভিযোগের সূত্র ধরেই দেশের শীর্ষ তদন্তকারী সংস্থার গৃহযুদ্ধ আরও ঘোরালো হল। যা আরও কিছুটা বিড়ম্বনা বাড়ালো দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। কারণ সিবিআইয়ের বিশেষ অধিকর্তা আস্থানা খোদ মোদীর আস্থাভাজন বলেই বিভিন্ন মহলে পরিচিত।
আদালতে বাসসি দাবি করেন, আস্থানার সঙ্গেই দুর্নীতিতে জড়িত গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ (রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং)-এর উচ্চপদস্থ অফিসার সামন্ত গয়াল। পাঞ্জাব ক্যাডারের আইপিএস সামন্ত গয়াল এখন ‘র’-এর স্পেশাল সেক্রেটারি হিসেবে কর্মরত। পাশাপাশি ‘র’-এর শীর্ষ পদ ও পাঞ্জাব পুলিশের ডিজিপি পদের অন্যতম প্রধান দাবিদার।
বাসসির অভিযোগ, হায়দরাবাদের ব্যবসায়ী সানা সতীশ বাবুর কাছ থেকে আস্থানার প্রতিনিধি হিসেবে ঘুষ নেন দুবাইয়ের ব্যবসায়ী মনোজ প্রসাদ। মনোজ-সোমেশের বাবা দেবেশ্বর প্রসাদ ‘র’-এ কাজ করতেন। ১৬ অক্টোবর গভীর রাতে সিবিআইয়ের হাতে মনোজের গ্রেফতারির খবর পেয়েই মনোজের ভাই সোমেশ যোগাযোগ করেন ‘র’ অফিসার সামন্তের সঙ্গে। সামন্ত যোগাযোগ করেন আস্থানার সঙ্গে। এরপরই সোমেশ তাঁর শ্বশুরকে ফোনে আশ্বাস দেন, ‘আস্থানা তো আপনা আদমি হ্যায়’
আসলে আস্থানার বিরুদ্ধেই ঘুষ নেওয়ার অভিযোগেরই তদন্ত করছিলেন বাসসি। তখনই তিনি ফোন ট্র্যাক করে, কল রেকর্ডস থেকে এ তথ্য জানতে পারেন। সিবিআই ডিরেক্টর অলোক বর্মার সঙ্গে আস্থানার সংঘাত প্রকাশ্যে আসার পরেই ওই দু’জনকে ছুটিতে পাঠানো হয়। বাসসিকে আন্দামানে বদলি করা হয়।
আজ নিজের বদলির সিদ্ধান্তে স্থগিতাদেশ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন বাসসি। সেই পিটিশনেই তিনি আস্থানার বিরুদ্ধে তদন্তে পাওয়া যাবতীয় তথ্যপ্রমাণ দাখিল করে দিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি জানান, এমন প্রমাণ আরও রয়েছে। তাঁর আর্জি, আস্থানার বিরুদ্ধে আদালতের নজরদারিতে তদন্ত করুক এসআইটি।
খোদ মোদীর আস্থাভাজন বলে পরিচিত আস্থানার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এমনিতেই মুখ পুড়িয়েছে সরকারের। এ বার আস্থানার সঙ্গে ‘র’-এর উচ্চপদস্থ অফিসার গয়ালের নামও জড়িয়ে যাওয়ায় বিড়ম্বনা বাড়ল বই কমল না।