দেশের ইউনিটি শিকেয় উঠেছে, এদিকে ইউনিটির নামে স্ট্যাচু গড়ছেন মোদী। দেশে এবার লৌহপুরুষ সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের ১৮২ মিটার উঁচু মূর্তির উদ্বোধন করবেন তিনি। বিশ্বের উচ্চতম এই মূর্তিটির নামই ‘স্ট্যাচু অফ ইউনিটি’।
আমেরিকার স্ট্যাচু অফ লিবার্টির উচ্চতা ৯৩ মিটার। তার প্রায় দ্বিগুণ উচ্চতার মূর্তির মেগা উদ্বোধন ঘিরে ইতিমধ্যেই হোর্ডিং, পোস্টারে ছেয়ে গেছে দেশের বিভিন্ন জায়গা। কিন্তু প্যাটেলের নিজের রাজ্য গুজরাটেই, প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্পে আদিবাসী বিক্ষোভ চরম পর্যায়ে।
ওই এলাকার প্রধানমন্ত্রী ও প্যাটেলের মুখ আঁকা বহু ব্যানার, পোস্টার, হোর্ডিং ছিঁড়ে ফেলে লাগানো হয়েছে আদিবাসী নেতাদের মুখ আঁকা পোস্টার। পরিস্থিতি এতটাই প্রতিকূল হয়ে উঠেছে যে বিজেপি-র কর্মী-সমর্থকদের মোদীর কাট আউট লাগাতে হচ্ছে পুলিশি প্রহরায়।
মানুষের মনে ক্ষোভ জমে থাকাটাই স্বাভাবিক। ভোটের আগে হাজার প্রতিশ্রুতি দিলেও, এখনও পূড়োণ সেসব। পরিস্থিতি সামাল দিতে উদ্বোধনের ১০ দিন আগে থেকেই এলাকায় জারি করা রয়েছে ১৪৪ ধারা।
মূর্তি তৈরির প্রকল্প আদিবাসীদের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করেছে, এই অভিযোগ তুলে প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন হাজার হাজার আদিবাসী। তাঁদের অভিযোগ, মূর্তি প্রকল্প ও তার আশপাশে সর্দার সরোবর প্রকল্পের জন্য সরকার আদিবাসীদের থেকে জমি নেয়। তাঁদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হলেও বিকল্প জমি বা কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি পূরণ করা হয়নি।
এ কথাও বলা হচ্ছে যে ২০ হাজার বর্গমিটার এলাকার এই মূর্তি তাঁদের জীবিকাকে ব্যাহত করবে। নর্মদা জেলার ৭২টি আদিবাসী গ্রামে তাই শুরু হয়েছে ‘অরন্ধন’ সত্যাগ্রহ। এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন আদিবাসী নেতা প্রফুল্ল বাসব। এর পাশাপাশি আছে আখচাষিদের ক্ষোভ। যে জায়গায় মূর্তিটি বসছে সেখানে আগে ছিল চিনিকল। আখচাষিদের টাকা মেরে মালিকরা পালিয়ে গেছে।
আদিবাসী সংগঠনের নেতা প্রফুল্ল বাসব বলেছেন, ‘সর্দার প্যাটেলের বিরোধী আমরা নই। আমরা আদিবাসীদের স্বার্থের কথা না ভেবে কাজ করার বিরোধিতা করছি। ৭২টি আদিবাসী গ্রামে অরন্ধন পালিত হবে যতদিন না সরকার আমাদের দাবি মেনে নিচ্ছে।’ তাঁর কথায়, ‘বিশ্বের এই প্রথম কোনও দেশের প্রধানমন্ত্রীর পোস্টার রক্ষার জন্য পুলিশকে পাহারায় বসতে হয়েছে।’
গুজরাটের বিভিন্ন প্রকল্পে তাঁদের জমি নেওয়ার পর ঠিকমতো ক্ষতিপূরণ না দেওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সর্দার প্যাটেলের বিশাল মূর্তির উদ্বোধনের দিন রাজ্য জুড়ে বনধের পথেই হাঁটছে আদিবাসীরা।