কেন্দ্র বনাম আরবিআই মতান্তর এমন জায়গায় পৌঁচেছে যে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর, ডেপুটি গভর্নর সহ তাঁদের গোটা টিম মেয়াদ পূরণের আগেই ইস্তফা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছে ওয়াকিবহাল মহল। কারণ এখনও পর্যন্ত সরকারে সঙ্গে বিরোধের কোনও মীমাংসাসূত্র পাওয়া যায়নি। সমাধানসূত্রের সন্ধান চলছে। কিন্তু গত শুক্রবার ডেপুটি গভর্নর বিরল আচার্য যেভাবে সরকারকে হুঁশিয়ারি প্রদান করেছেন তার পর সমাধান সূত্র বেরনোর সম্ভাবনা কম বলেই মনে করা হচ্ছে।
লাগাতার পাঁচ বছর ধরে অর্থনীতির দুরবস্থার পর অবশেষে কিছু আশাব্যঞ্জক সিদ্ধান্ত তথা প্রকল্প ঘোষণা করতে উদগ্রীব সরকার। কিন্তু বাজেট তৈরির সময় সরকার এবং যে সংস্থার মধ্যে সবথেকে বেশি সমন্বয়ের প্রয়োজন সেই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ও অর্থমন্ত্রকের মধ্যে কার্যত বাক্যালাপ বন্ধ হওয়ার মতোই পরিস্থিতি।
সুদের হার পরিবর্তন নিয়ে অর্থমন্ত্রক ও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মতান্তরও চরম আকার নিয়েছে মাঝেমধ্যেই। নন ব্যাঙ্কিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে আরও বেশি ছাড় দিয়ে তাঁদের সুবিধা করে দেওয়া নিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ও সরকারের মধ্যে বিরোধ এখনও চলছে। নীরব মোদি কাণ্ডের পর সরকারের পক্ষ থেকে প্রায় গোটা দায় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের উপর চাপিয়ে দেওয়ার একটি চেষ্টা হয়। সেটি রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে ক্ষুব্ধ করে। এর পাশাপাশি আবার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পরিচালন বোর্ডে বাইরে থেকে কয়েকজন ডিরেক্টরকে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেটা নিয়েও আপত্তি তুলেছেন গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নর। সব মিলিয়ে সরকার ও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এই দ্বন্দ্ব নিয়ে চরম অচলাবস্থা চলছে। অথচ সামনেই বাজেট।
এমনকী বিজেপি ও সরকারের কয়েকটি অংশ থেকে বর্তমান গভর্নর উর্জিত প্যাটেলকে ইউপিএ আমলে নিযুক্ত রঘুরাম রাজনের থেকেও খারাপ গভর্নর আখ্যা দেওয়া হচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার কিংবা অর্থনীতির নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে কেন এই সরকারের লাগাতার বিরোধ দেখা দিচ্ছে তা নিয়ে। রঘুরাম রাজন চলে গিয়েছিলেন। মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রমণ্যমও চলে গিয়েছেন। এবার খোদ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নরের সঙ্গে ঝগড়া শুরু হয়েছে। তাঁরা সরকারের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে মতান্তর সত্ত্বেও কতদিন এভাবে টিকে থাকতে পারবেন তা নিয়ে ঘোর সংশয় আছে।