কেরলে শবরীমালা মন্দির ইস্যুতে সিপিএম-সহ গোটা বাম শিবিরের এখন শিরে সংক্রান্তি অবস্থা। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যারপনরাই বিচলিত। মন্দিরে ১০ থেকে ৫০ বছর বয়সি মহিলাদের প্রবেশাধিকারের পক্ষে সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছে, তা কার্যকর করতে গিয়ে ফ্যাসাদে বাম মোর্চার সরকার। এই বিষয়ে প্রশাসনিক বন্দোবস্ত নেওয়াকে কেন্দ্র করে একদিকে যেমন গোটা রাজ্য উত্তাল, তেমনই নিচুতলার কর্মী-সমর্থকদের মধ্যেও সিপিএম ছাড়ার ধুম দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি সামলাতে শুধু সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে নয়, রাজ্যের সব জেলা সদরে বাম জোটের ব্যানারে জনসভা করতে নেমেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। মানুষ যাতে ভুল না বোঝে, সেজন্য বিজয়নরা সুপ্রিম কোর্টের রায় এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পাঠানো নির্দেশিকার কথাও উদ্ধৃত করে মাঠে-ময়দানে ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। এই সবরীমালা ইস্যু আগামী লোকসভা নির্বাচনে যে ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে, সেই আশঙ্কা রয়েছে বাম শিবিরে।
শীর্ষ আদালতের রায়ের পর মন্দির চত্বরে ব্যাপক পুলিসি ব্যবস্থা থাকায় ভক্তকুলের রোষের টার্গেট হয়েছে বামশাসিত সরকার, বিশেষ করে সিপিএম। ক্ষয় রগ দেখা দিয়েছে দলে। গত কয়েক দিনে ত্রিশূর, পটনমভিট্টা, কোল্লাম, এর্নাকুলাম প্রভৃতি জেলায় সিপিএম এবং সিপিআইয়ের নিচুতলায় দলত্যাগের ঘটনা ঘটেছে। দুই মার্কসবাদী দলেরই শাখা স্তরের একাধিক নেতাও পার্টি ছাড়ার কথা ঘোষণা করেছেন। এমনকী, সিপিএমের এরিয়া কমিটি পর্যায়ের কয়েকজন নেতাও দলের সঙ্গে সংশ্রব ত্যাগ করার কথা জানিয়েছেন। এঁদের সকলেরই বক্তব্য, সবরীমালা মন্দিরে পঞ্চাশ অনুর্ধ্ব মহিলাদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি রাজ্যের ধর্মপ্রাণ হিন্দুদের কাছে দীর্ঘকালের একটা আবেগের বিষয়। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর মন্দিরের দায়িত্বে থাকা দেবস্বম বোর্ড এবং রাজ্য সরকারের তরফে এই আবেগের কথা জানিয়ে অবশ্যই রিভিউ পিটিশন করা উচিত ছিল। কিন্তু তারা সে পথে না হাঁটায় মানুষের আবেগ ধাক্কা খেয়েছে। এই অবস্থায় তাঁরা দলের সঙ্গে থাকাকে অর্থহীন বলেই মনে করছেন।
কর্মী-সমর্থকদের এভাবে দল ছাড়ার প্রবণতা ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় সিঁদূরে মেঘ দেখছে সিপিএম-সিপিআই নেতৃত্ব। বিভিন্ন জায়গায় জনসভা করে দলের বাধ্যবাধকতা জানাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন স্বয়ং। বিলি করা হচ্ছে পুস্তিকা। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতি কতটা সামাল দেওয়া যাবে তা নিয়ে সংশয় আছে খোদ দলের অন্দরেই।