‘ভাগ্যে খোকা ছিল মায়ের কাছে।’ কবিতার মত বাস্তবে হল না এমন কিছুই। বরং মায়ের দুর্ভাগ্যের জন্য দায়ি খোদ তাঁর ‘খোকা’-ই। বৃদ্ধা মাকে বাড়িতে তালাবন্ধ করে রেখেই পুজোর ছুটিতে স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে চলে গেলেন ‘বীরপুরুষ’ ছেলে।
এমনই ঘটনার সাক্ষী থাকলেন নিউ ব্যারাকপুর থানার সুকান্ত নগরের নতুনপল্লি পূর্বাচলের বাসিন্দারা। ওই ৮৫ পেরনো বৃদ্ধার খাবার বলতে ঘরে পড়ে ছিল স্রেফ কয়েক মুঠো চিঁড়ে আর মুড়ি। তবে বাসিন্দা, পুলিশ ও তাঁর ছোট বৌমার তৎপরতায় এখন খাওয়াদাওয়া সময়মতো হচ্ছে ওই বৃদ্ধার।
বৃদ্ধা সাধনারানি নাগ থাকেন নিজের বাড়িতেই। দুই ছেলের মধ্যে ছোট ছেলে অনেক আগেই মারা গিয়েছেন। তাই বড় ছেলে মৃণালকান্তির কাছেই থাকতেন তিনি।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, অনেক আগেই নিজের ভাই-বৌকে বাড়িছাড়া করেছেন মৃণালকান্তি। বাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়ে ছোট বৌ মণিকা নতুন পল্লিতে আলাদা থাকেন। বাসিন্দারা জানান, গত সোমবার মৃণাল তাঁর বৃদ্ধা মাকে একাই বাড়িতে রেখে বাইরে থেকে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে বেড়াতে চলে যান।
প্রথমে ওই বৃদ্ধা ছেলের সম্মানহানির ভয়ে কাউকে কিছু জানাতে রাজি হননি। তবে খিদের জ্বালায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর বন্দি অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে সাধনা বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে প্রতিবেশীদের ডাকতে থাকেন।
শুক্রবার নিউ ব্যারাকপুর থানার পুলিশ বড় ছেলে মৃণালকান্তি নাগের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেছে। মৃণালের দাবি, তিনি চিকিৎসার জন্য হায়দরাবাদ গিয়েছেন। প্রতিবেশী কয়েকজনকে তিনি সে কথা জানিয়েও গিয়েছেন। পুলিশ যত দ্রুত সম্ভব তাঁকে বাড়িতে ফিরে আসার নির্দেশ দিয়েছে। তিনি ফিরলেই এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
দু’দিন আগেই মিষ্টি খাওয়ার ‘অপরাধ’-এ বৃদ্ধ বাবাকে চড় মেরেছিলেন ছেলে। আর এবার বৃদ্ধা মাকে তালা বন্ধ করে রেখে পুজোয় বেড়াতে গেল আর এক গুণধর। সব মিলিয়ে বলা যায় বিপন্ন বার্ধক্যে মা-বাবার দায় নিচ্ছে না সন্তানেরা।