শিল্প থেকে আয়কর আদায়ে মোদীর রাজ্য গুজরাটকে টেক্কা দিল মমতার বাংলা। চলতি আর্থিক বছরে ১৫ সেপ্টেম্বর ছিল কর্পোরেট ট্যাক্সের কিস্তি জমা করার সময়সীমা। সেই হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরে গুজরাতে আয়কর জমা পড়েছে ১১ হাজার ১৬৯ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা। সেখানে বাংলার শিল্প থেকে আয়কর আদায় হয়েছে ১২ হাজার ৩৩০ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা। অর্থাৎ, এক হাজার কোটি টাকারও অনেক বেশি অঙ্কে এগিয়ে আছে বাংলা।
যে রাজ্যে যত বেশি শিল্প সেই রাজ্যে কর্পোরেট ট্যাক্স বাবদ আদায় তত বেশি। বাংলায় শিল্পের চেহারা যে বদলাচ্ছে, এই রিপোর্ট তার একটি নির্ভরযোগ্য প্রমাণ, বলছেন দপ্তরের কর্তারাই।
শিল্পের জন্য খ্যাতি পেয়েছে, এমন রাজ্যগুলির মধ্যে গুজরাত অন্যতম। শিল্প নিয়ে এদেশের যে কোনও তুল্যমূল্য আলোচনায় তাই বেশিরভাগ সময়ই উঠে আসে গুজরাতের নাম। সেই গুজরাটকে কীভাবে টেক্কা দিল বাংলা? দপ্তরের কর্তাদের কথায়, প্রথমত, শিল্প সংখ্যা বাড়লেই আয়কর আদায় বাড়বে, এমন কোনও কথা নেই। শিল্পগুলির লাভের টাকা বাড়লে, তবেই বাড়বে আয়কর আদায়ের সম্ভাবনা। সেদিক থেকে দেখতে গেলে এ রাজ্যে লাভজনক ব্যবসার পরিমাণ বেশি। তবে আরও একটি কারণে গুজরাত পিছিয়ে আছে বলে দাবি করেছেন আয়কর দপ্তরের কর্তারা। তাঁরা বলছেন, বহু সংস্থা আছে, যারা গুজরাতে কারখানা বা উৎপাদন ইউনিট চালু রাখলেও, তার হিসেবপত্র রাখে মুম্বইয়ের অফিসে। যে অঞ্চলে কোনও সংস্থার মূল অফিস রয়েছে, আয়কর জমা পড়ে সেখান থেকেই। সেই কারণে গুজরাতের শিল্পবহর বাড়লেও, অনেক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের প্রধান অফিস যেহেতু নিয়ন্ত্রিত হয় মহারাষ্ট্র বা দিল্লি থেকে, তাই সেই সংস্থাগুলি আয়কর দিলে, তা ওই রাজ্যের আদায় হিসেবে বিবেচিত হয়।
বাংলায় শিল্প থেকে আয়কর আদায়ের পরিমাণ কীভাবে বেড়েছে? দেখা যাচ্ছে, ২০১৫-১৬ আর্থিক বছরের জন্য এ রাজ্যের আয়করের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছিল ৩১ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। বছর শেষে আদায় হয় ৩১ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রাকে এক প্রকার ছুঁয়ে ফেলে রাজ্য। তার পরের বছর, অর্থাৎ ২০১৬-১৭ আর্থিক বছরে আয়করের টার্গেট ছিল ৩৫ হাজার ৫২০ কোটি টাকা। সেই বছরে আদায় হয় ৩৬ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা। অর্থাৎ টার্গেট থেকে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা বেশি আদায় হয় গত আর্থিক বছরে। গত বছরে সেই টার্গেট রাখা হয় ৪১ হাজার ৮৯১ কোটি টাকা। সেই লক্ষ্যও ইতিমধ্যেই পূরণ করেছে রাজ্য। বিগত কয়েক বছরের সাফল্য এ বছরও পশ্চিমবঙ্গ ধরে রাখতে সক্ষম হবে, আশায় আছেন দপ্তরের কর্তারা।