কুসন্তান যদিবা হয় কুপিতা কদাপি নয়।
মা-বাবার ভালোবাসায় খাদ থাকে না। যে ছেলের ছোট হাত ধরে হাঁটতে শিখিয়েছিলেন বাবা, সেই বাবার গায়েই হাত তুলেছেন অশোকনগরের প্রদীপ বিশ্বাস। কিন্তু তার পরেও একমাত্র ছেলেকে বিপাকে ফেলতে নারাজ বৃদ্ধ পিতা মানিকলাল বিশ্বাস। ছেলেকে ছাড়াতে আদালতে আত্মহত্যার হুঁশিয়ারি পর্যন্ত দিয়েছিলেনন তিনি। বৃদ্ধের দাবি, আমিই তো অন্যায় করেছি! তাঁর শুধু একটাই আফশোস, ‘ছেলে মারধর করে আমি তো কাউকে বলিনি, লোকজন যে কীভাবে সব জেনে গেল…!’
ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওয় দেখা গিয়েছে, বৃদ্ধ বাবা মানিকলালের কুর্তার কলার ধরে চড় মেরে যাচ্ছেন এক ব্যক্তি। বৃদ্ধের ‘অপরাধ’, স্ত্রী বন্দনাকে আড়ালে ডেকে মিষ্টি খাইয়েছিলেন তিনি। স্ত্রী সুগারের রোগী। বাবা কেন তাঁকে মিষ্টি খাওয়ালেন, তা নিয়ে রেগে আগুন ছেলে। বাবাকে ‘শিক্ষা দিতে’ গায়ে হাত তুলতেও বাধেনি তার। ওই ভিডিওটিই ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পরই ওঠে প্রতিবাদের ঝড়। পুলিশের কাছেও খবর দেন বহু মানুষ। এরপরই প্রদীপ বিশ্বাসকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
কিন্তু ছেলের প্রতি বৃদ্ধ পিতার ভালোবাসা কমেনি একচুলও। রাতেই থানায় ছোটেন তিনি।ওসি আশিস দলুইয়ের কাছে অনুরোধ করেন, ‘ছেলেটা ভুল করে ফেলেছে। তবে ছেড়ে দিন ওকে’। বাবার এমন স্নেহ দেখে ওসি হতবাক।লকআপ থেকে তিনি ডেকে পাঠান প্রদীপকে। বলেন, ‘দেখো, তুমি বাবাকে মারধর করো, আর উনিই তোমাকে ছাড়াতে থানায় এসেছেন’। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে প্রদীপ। বলে, ‘অন্যায় করেছি, এমন কাজ আর করব না।‘
কুলাঙ্গার প্রদীপকে ছাড়েনি পুলিশ। বৃহস্পতিবার তাঁকে তোলা হয় বারাসত আদালতে। সেখানেই বাবার স্নেহ উপচে পড়ল ছেলের উপরে। আদালতে ছেলের জামিন চাইলেন খোদ বাবা। বললেন, একমাত্র ছেলে। ওকে ছাড়া চলবে না। এমনকি ছেলেকে জামিন না দিলে আত্মহত্যার হুমকিও দিলেন। পিতার এমন আর্তনাদের সাড়া দিলেন বিচারক। জামিনে মুক্তি পেলেন ছেলে।
পাড়া-পড়শির অভিযোগ, ২০ অক্টোবরের যে ঘটনার ছবি সোস্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছে, তা নতুন কিছু নয়। বৃদ্ধ বাবাকে প্রায়ই মারধর করত প্রদীপ। সকলে যে কারণে খাপ্পা অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভার কর্মী বছর চল্লিশের প্রদীপের বিরুদ্ধে। এদিন সকালে অশোকনগরের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল বৃদ্ধ মানিকলাল গালে হাত দিয়ে বসে। বললেন, ‘ছেলে অন্যায় করেছে ঠিকই, তবে ওর কোনও শাস্তি হোক চাই না। আমার একটাই তো ছেলে। ওর কিছু হলে আমাদের কে দেখবে’। পাশেই বসেছিলেন প্রদীপের মা বৃদ্ধা বন্দনা। তিনিও সায় দিলেন স্বামীর কথায়। সত্যিই তো, কুসন্তান যদিওবা হয়, কুমাতা কদাপি নয়।