বেড়াতে গিয়েছিলেন সিকিম। ফেরার কথা ছিল লক্ষ্মী পুজোয়। ফিরলেন, কিন্তু কফিনবন্দী হয়ে। পুজোয় আর বরণ হল না লক্ষ্মীর। আঁধার নামল মছলন্দপুর, বারাসতে।
দুপুরেই সিকিমে দুর্ঘটনায় মৃত হাবড়ার চিকিৎসক বিভাস পাঠকের বাড়ি আসেন তৃণমূল নেতা ও খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। মৃতের পরিবার পরিজনদের পাশাপাশি স্থানীয় মানুষের সঙ্গেও কথা বলেন তিনি। মৃতদের পরিবারের যেকোনও রকম সহযোগিতার জন্য পাশে থাকার আশ্বাস দেন জ্যোতিপ্রিয়। আহতদের যাবতীয় চিকিৎসার ভারও নিয়েছেন তিনি। মৃতের পরিবারকে সান্তনা জানিয়ে খাদ্যন্ত্রী বলেন, ‘কিছু বলার ভাষা নেই। খুবই মর্মান্তিক ঘটনা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির নির্দেশে আমি আজ এখানে এসেছি। পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেবের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রেখে মৃতদেহ নির্বিঘ্নে বাড়িতে আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আহতদেরও বাড়ি ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। তাঁদের চিকিৎসার ব্যাপারেও প্রয়োজনীয় সাহায্য করা হবে’। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পরিবার নিয়ে বেড়াতে গেলে পর্যটকদের আরও বেশি সাবধানী হতে হবে।‘
হাবড়ার মছলন্দপুর নতুনপল্লী এলাকার বাসিন্দা, চিকিৎসক বিভাস পাঠক পরিবার–পরিজনদের নিয়ে সিকিম বেড়াতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। আর তাতেই মৃত্যু হয় চিকিৎসক বিভাস পাঠক, তাঁর বাবা, মা এবং জ্যাঠতুতো দিদির। বাকিরা আহত হন। বিমানে শিলিগুড়ি থেকে মৃতদেহগুলি দমদম বিমানবন্দরে এসে পৌঁছয়। সেখান থেকে দুপুর ৩টে নাগাদ দেহ এসে পৌঁছায় মছলন্দপুরের বাড়িতে। গ্রামে দেহ পৌঁছতেই ওঠে কান্নার রোল। এলাকার জনপ্রিয় মানুষ এবং চিকিৎসক বিভাস পাঠক এবং তাঁর পরিবারের মৃত সদস্যদের একবার শেষ দেখা দেখতে শয়ে শয়ে মানুষ হাজির হন পাঠক বাড়িতে। অবশেষে মানুষের চাপ সামলাতে মৃতদেহগুলি স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে নিয়ে যাওয়া হয়। বিভাস পাঠকের বাবার ইচ্ছেতে মৃতদেহগুলির শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় ব্যারাকপুরের গান্ধীঘাটে।
বিকেলে বারাসত নবপল্লীর ফ্ল্যাটে আসে মৃত নীহারেন্দুর দেহ। সোমবার সিকিমের চারধাম থেকে গ্যাংটকে যাওয়ার পথে খাদে গাড়ি উল্টে মৃত্যু হয় তাঁর। নীহারেন্দুর কফিনবন্দী দেহ নবপল্লী ছোট বাজার এলাকায় পৌঁছতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর স্ত্রী সবিতা বিশ্বাস। কাঁদতে কাঁদতে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছিলেন তিনি। চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি নীহারেন্দুর ছেলেও। স্ত্রী সবিতার আক্ষেপ, ‘যদি ওকে ঘুরতে যাওয়ার জন্য জোর না করতাম তা হলে এইদিন কখনই এই দিন দেখতে হত না।’ সবিতাদেবীকে এদিন পাড়াপ্রতিবেশীদের পাশাপাশি সান্ত্বনা দেন বারাসত পুরসভার পুরপারিষদ সদস্য চম্পক দাস ও কাউন্সিলর কণিকা রায়চৌধুরি-সহ আরও অনেকে। নিমতলা শ্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় নীহারেন্দুর।