রবিবার মধ্যরাতে কলকাতা বিমানবন্দরের জনস্রোত দেখার পর এটাই প্রমান হচ্ছে যে ব্যারেটোর পাশের আসনে সাদরে হাইতিয়ানকে জায়গা করে দিচ্ছেন মোহন জনতা।
শুধু সবুজ তোতা নয়, এর আগে কোনও বিদেশির বেলায় এ দৃশ্য দেখেনি নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোস ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট। রবিবার মধ্যরাত দেখল সে–ছবি, প্রথমবারের জন্য।
উমা কৈলাসে পাড়ি দিয়েছেন। বিসর্জন শেষ। চারিদিকে বিষাদের আবহ। রবিবার রাতে বিমানবন্দরের বাইরের ছবি দেখলে মনে হতে বাধ্য, বাগান জনতার কাছে যেন উৎসবের শুরু।
তখনও সনির বিমান কলকাতার মাটি ছুঁতে আরও ঘণ্টাখানেক বাকি। রাত দেড়টায় ম্যাটাডোর ভর্তি সনি–ভক্তদের ভিড় জমাতে দেখে গুলিয়ে যেতে বাধ্য, ডার্বি ম্যাচের ভিড় নাকি! রাত যত বাড়তে থাকে, বিমানবন্দরের বাইরে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। দায়িত্বে থাকা সিআইএসএফ কর্তারা বাগান কর্তাদের অনুরোধ করেন, সনিকে অন্য গেট দিযে বার করতে। কারণ, প্রচণ্ড ভিড়ে কিছু বিপদ ঘটে যেতে পারে। মোহনবাগান জনতার ‘রাজা’–কে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরের বাইরে আবেগের মহাবিস্ফোরণ।
১০ মাস আগে চোখের জলে বিদায় নেওয়ার আগে সনি বলে গিয়েছিলেন, ‘ঋণ শোধ করতে আবার ফিরব।’ তিনি ফিরলেন। তবে, তঁাকে বরণ করে নিতে এভাবে উপচে পড়বে জনতা, তিনি নিজেও কল্পনা করতে পারেননি। গত চার বছর ধরে তিনি যখনই কলকাতায় আসুন না কেন, বিমানবন্দরে ভিড় জমেছে তঁার ভক্তদের। কিন্তু, রবিবারের ছবি দেখে সনি বলে দিচ্ছেন, ‘আমি প্রথমবার কলকাতায় পা রাখার সময়েও বিমানবন্দরে সমর্থকরা এসেছিল। গত বছরও মাঝরাতে অনেকে এসেছিল। এবারের ভিড়টা দেখে আমি অবাক হয়ে গেছি। এই ভালবাসা আমি কোথাও পাব না।’ একটু থেমে জুড়েও দিলেন, মোহনবাগানের কেরিয়ারে তঁার অন্যতম সেরা মুহূর্ত। বিমানবন্দরের বাইরে বেরিয়ে গাড়িতে উঠতে ওইটুকু পথ পেরোতে সনির সময় লেগে গেল মিনিট কুড়ি। সদস্য–সমর্থকদের ভালবাসার অত্যাচারের হাত থেকে হাইতিয়ানকে রক্ষা করতে হাতে, কোমরে অল্প চোটও পেলেন বাগান কর্তা অর্ণব মুখার্জি, মিডিয়া ম্যানেজার ইমরান।
দুর্গোৎসব মিটতে না মিটতেই সমর্থকদের এই অনাবিল আনন্দ এনে দিলেন বাগানের সৃঞ্জয় বসু, দেবাশিস দত্ত, অর্ণব মুখার্জি–রা। এছাড়াও সনিকে আনতে হাজির ছিলেন স্বপন ব্যানার্জি, সঞ্জয় (বাপ্পা) ঘোষ, দীপক যাদব। সনি গাড়িতে উঠতেই তঁার গাড়ির পিছন পিছন প্রায় কুড়িটা বাইক ‘এসকর্ট’ করে হোটেলে পর্যন্ত যায়। রাত সাড়ে তিনটের সময় এতগুলো বাইক ঢুকতে দেখে নিউ টাউনের হোটেলের গেটে দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তারক্ষী কিছু বুঝে উঠতে পারছিলেন না। সনিকে দেওয়ার জন্য অনেকে উপহার নিয়েই বাড়ি ফিরে গেছেন, ভিড়ের ঠেলায় সনির কাছে পৌঁছতে না পেরে। তবে, গাড়িতে ওঠার আগে ‘স্টেনগান সেলিব্রেশনের’ ছবি দেওয়া টিফোটা দেখে হেসে ফেলেন তিনি। হোটেলের লবিতে বসে বলে দেন, ‘সত্যি, এই ওয়েলকামটা আমার কাছে স্পেশ্যাল। বিমানবন্দরের বাইরে এত লোক দেখে আমি উত্তেজিত হয়ে পড়ি। আমি জানি ওরা কী চায়, নিজের সেরাটা উজাড় করে দিয়ে ওদের মুখে হাসি ফোটাতে চাই।’ নিজের ফিটনেস সম্পর্কে বলেন, ‘আমি ১০০ শতাংশ ফিট। কলকাতায় আসার আগে কয়েকটা ফ্রেন্ডলি ম্যাচও খেলে এসেছি। আশা করি, ফিটনেস টেস্টে পাশ করব। এবং আই লিগে প্রথম ম্যাচ খেলতে না পারলেও দ্বিতীয় ম্যাচ থেকে মাঠে নামব। সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে গেলে পরিবারকে নিয়ে আসব। আমার কন্যাসন্তানের জন্য আই লিগটা জিততে চাই।’ সনি যখন কথাগুলো বলছিলেন, তঁাকে ঘিরে রাখা দেবাশিস, অর্ণব, সৃঞ্জয়দের মুখেও স্বস্তির হাসি। দেবাশিস বলছিলেন, ‘কোনও বিদেশির জন্য এত ভিড় আমি আগে কখনও দেখিনি। আইএসএলেও তো এত নামকরা বিদেশিরা এসেছে, বিশ্বকাপাররা এসেছে, কই তাদের জন্য দেখিনি এই ভিড়। এটাই প্রমাণ করে, মোহনবাগান–ইস্টবেঙ্গলই বঁাচিয়ে রেখেছে ভারতীয় ফুটবলকে।’
(সংগৃহীত)