দেখতে দেখতেই কেটে যায় দুর্গাপুজোর কটাদিন। বিজয়ার দিন সকাল থেকেই শুরু হয়ে যায় মন খারাপ। তারপর প্রতিমা বিসর্জন হলেই আপামর বাঙালির মুখ ভার হয়ে যায়। কিন্তু, বারাসতে এখন উল্টো সুর। কারণ এখানে দুর্গাপুজোর বিসর্জন মানেই কালীপুজোর ‘বোধন’ শুরু। ফলে পুজো মিটতেই শুরু হয়ে গিয়েছে ঐতিহ্যবাহী কালীপুজোর কাউন্টডাউন।
জগদ্ধাত্রী পুজোতে যেমন কৃষ্ণনগর-চন্দননগরের নাম, কার্তিক যেমন বাঁশবেড়িয়ার বিখ্যাত, ঠিক তেমনই কালীপুজোর শহর মানেই তো বারাসত। বারাসত থেকে মধ্যমগ্রাম, নতুন নতুন থিমের মণ্ডপের সঙ্গে অভিনব আলোর রোশনাইয়ে চোখ ধাঁধিয়ে দিতে কোমর বেঁধে ময়দানে নেমে পড়েছেন পুজো উদ্যোক্তারা। চলছে একে অপরকে টেক্কা দেওয়ার ‘অদৃশ্য’ প্রতিযোগিতাও।
কলকাতায় দুর্গাপুজো জন্য মানুষ যেমন অপেক্ষা করে থাকেন, তেমনি বারাসতের কালীপুজোর জন্যেও এলাকার মানুষ সারা বছর মুখিয়ে থাকেন। এই শহরে দুর্গাপুজোর চেয়েও কালীপুজোর আড়ম্বর অনেক বেশি। যাঁরা বিগ বাজেটের পুজো করেন, তাঁদের কালীপুজোর মণ্ডপ তৈরি শুরু হয়েছে দুর্গাপুজোর মণ্ডপ তৈরির আগে থেকে। এখানকার কালীপুজোর বিগ বাজেটের থিমের মণ্ডপগুলি কলকাতার বড় বড় দুর্গাপুজোর মণ্ডপকেও টেক্কা দেয়।
দুর্গাপুজোর মতই বারাসত-মধ্যমগ্রামের কালীপুজোও টানা চারদিন ধরে চলে। অনেকে পুজোর মেয়াদ বাড়াতে দু’দিন আগে উদ্বোধন করে ফেলেন। ফলে, সেই সব মণ্ডপে ছ’দিন ধরে পুজোর উৎসব চলে। এই চারদিনে লক্ষ লক্ষ মানুষের ঢল নামে। তাই এখন থেকে পুজো উদ্যোক্তারা যেমন দাঁড়িয়ে থেকে থিমের কাজ করাচ্ছেন, তেমনই দুর্গাপুজো শেষ হতে পুলিশও প্রাথমিকভাবে কালীপুজোর প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে।
বারাসত শহরের কেএনসি রেজিমেন্ট-এর কর্ণধার তথা পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান অশনি মুখোপাধ্যায় বলেন, আমাদের মণ্ডপ দুর্গাপুজোর অনেক আগে থেকেই তৈরি শুরু হয়েছে। প্রায় শেষের মুখে। কালীপুজো বারাসত ও মধ্যমগ্রামের ঐতিহ্য। তাই আমরা বলি, দুর্গাপুজোর বিসর্জন মানেই বারাসতের কালীপুজোর ‘বোধন’ শুরু গেল। শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষা।
উৎসবের দিনগুলিতে লক্ষ লক্ষ দর্শনার্থীরা যাতে নির্বিঘ্নে প্রতিমা দর্শন করতে পারেন তার জন্য পুলিশ-প্রশাসনও এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। কালীপুজোর সময় ভিড় সামাল দিতে শহরের বিভিন্ন জায়গায় নো-এন্ট্রি পয়েন্ট থাকে। কোথায় কোথায় নো-এন্ট্রি হবে, কী কী নিরাপত্তাজনিত ব্যবস্থা নেওয়া হবে, শহরের কোথায় কোথায় সিটি টিভি বসানো হবে- সেসব নিয়ে খসড়া প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছে তারা। আবার কালীপুজোর সময় বারাসত ও মধ্যমগ্রাম পুরসভাকেও বড় ভূমিকা পালন করতে হয়। তাই দুই পুরসভা কর্তৃপক্ষও প্রস্তুতির জন্য তৈরি হচ্ছে। সব মিলিয়ে এখন থেকেই সাজ সাজ রব গোটা বারাসাত শহরে।