আবহাওয়া বড় বালাই। পুজোর আগেই নিম্নচাপের কবলে পড়েছিল রাজ্য। ঘূর্ণিঝড় না হলেও, বৃষ্টি হয়েছিল দিন দুয়েক। পুজোর মুখে সেই নিম্নচাপ কেটেও যায়। তবে বিগড়ে যায় আবহাওয়া।
বেশ কয়েকদিন ধরেই সকালবেলার দিকে বেশ গরম লাগে। বেলা গড়িয়ে দুপুর হলে বাড়ে রোদের তেজও। ফলে ঘরে পাখা-এসি চলে সারা সকাল। আবার সন্ধ্যা পড়তে না পড়তেই ঠান্ডা হিমেল ভাব। রাতে ঘুমোতে গিয়েও বিপত্তি। পাখা চালাবেন কী চালাবেন না, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়াও মুশকিল হয়ে পড়ে। দেখা যায়, চালালে ঠান্ডা লাগছে কিছুক্ষণ পর। আবার না চালালে গরম গরম ভাবের জন্য ঘুমই আসতে চাইছে না।
জমিয়ে শীত পড়ার আগে এমন অদ্ভুত আবহাওয়ায় শুধু অস্বস্তিই বাড়ছে না, বাড়ছে জ্বরজারি, শরীর খারাপও। রবিবার রাজ্যের নামকরা ডাক্তারবাবুরা জানালেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের এই সময়ে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, পরিবারে কারও সর্দি-কাশি-জ্বরজারি হয়নি, এমন গৃহস্থ বাড়িই খুঁজে পাওয়া কঠিন হচ্ছে। পাশাপাশি সেই জুন-জুলাই থেকে বাঙালির সঙ্গে আঠার মতো লেগে থাকা ডেঙ্গুর উপদ্রব আছেই।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ডেঙ্গু ছাড়াও সাধারণ জ্বর ও ইনফ্লুয়েঞ্জার উৎপাত হঠাৎ করে বেড়েছে এই ক’দিনে। শুধু বয়স্কই নয়, অল্পবয়সিদের মধ্যেও নিউমোনিয়ার প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। সুতরাং এই সময়টায় খুবই সতর্ক থাকতে হবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ অরিন্দম বিশ্বাস বলেন, ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়ার উপদ্রবের পাশাপাশি এ বছর এই সময়ে উল্লেখযোগ্যভাবে নিউমোনিয়ার প্রকোপ যেন একটু বেশিই হচ্ছে। চিন্তার বিষয় হল, দু’-তিনদিনের জ্বরের পর হঠাৎ করে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যাচ্ছে বহু কমবয়সি রোগীদের। শেষে দেখা যাচ্ছে নিউমোনিয়া হয়েছে।
অরিন্দমবাবুর পরামর্শ, কোনও জ্বরকেই অবহেলা করবেন না। একদিনের বেশি জ্বর হলে এনএসওয়ান, ম্যালেরিয়া, ম্যালেরিয়া অ্যান্টিজেন, সিবিসি ইত্যাদি পরীক্ষা করিয়ে নেওয়াই ভালো। সঙ্গে শ্বাসকষ্ট থাকলে চেস্ট এক্স-রে করিয়ে নেওয়া উচিত।
বি সি রায় শিশু হাসপাতালের অধ্যক্ষা ডাঃ মালা ভট্টাচার্য বলেন, বোঝাই যাচ্ছে অদ্ভুত আবহাওয়ার জন্য পাখা-এসি চালানো নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে যাচ্ছে মানুষ। তাও বাচ্চাদের কথা ভেবে বাবা-মায়েদের বলব, একটু কষ্ট করুন না। হাই স্পিডে পাখা চালালে বা এসি চললে ভোররাতের দিকে অনেক সময়ই বাচ্চাদের ঠান্ডা লেগে যায়।
খুব ছোট বাচ্চাদের গায়ে হাত দিয়ে যদি ওই সময় দেখেন, হাত-পা খুব ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে, বুঝতে হবে বিপদ আসতে পারে। অনেক সময়ই এ ধরনের বাচ্চাদের নিউমোনিয়া হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। তবে এখনই ওদের সোয়েটার ইত্যাদি পরিয়ে দেওয়ার প্রশ্ন আসে না। কিন্তু, ফুল হাতা হালকা সুতির জামা-প্যান্ট পরানো যেতে পারে। মশার উৎপাত থেকেও বাঁচবে, ঠান্ডাও আটকানো যাবে।
বিশিষ্ট হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ডাঃ রথীন চক্রবর্তী বলেন, আবহাওয়ার পরিবর্তনের জন্য প্রচুর মানুষই সর্দি-জ্বর, গা-হাত-পা ব্যথায় ভুগছেন। সর্দি-কাশির সঙ্গে গা-হাত-পা ব্যথা থাকলে রাসটাকস ২০০ দিনে দুই থেকে তিনবার চার-পাঁচ দানা করে দেওয়া যেতে পারে। সর্দির সঙ্গে শীত শীত ভাব থাকলে হিপারসালফ ২০০ একই ডোজে দিলে ভালো কাজ দিতে পারে। এছাড়া গলায় কফ আর খুসখুসে কাশি থাকলে রিউম্যাক্স দেওয়া যেতে পারে।
তবে সকলেই শেষে একটা কথাই বলেছেন। এই ক’দিন একটু সাবধানে থাকাই ভাল। অন্তত শীত পড়ার আগে অবধি। শীত কমলে সাধারণত নানারকম ভাইরাসের উপদ্রব কমে যায়। ফলে রোগও কম হয় তখন।