কার্যত লাশের স্তূপ। রক্ত, আহতদের গোঙানি, বাঁচার জন্য আর্ত চিৎকার। ট্রেনে ছিন্নভিন্ন হয়ে কাতরাচ্ছেন অনেকে। এর মধ্যেই সুযোগ সন্ধানী কেউ কেউ। চলছে অবাধ লুটপাট। মৃতে-আহতদের পকেট হাতড়ে তুলে নিচ্ছে সোনা-দানা, ঘড়ি, দামি মোবাইল, টাকা-পয়সা। একদিকে যখন কারও সর্বনাশ, অন্যদিকে কারও পৌষমাস।
অমৃতসরের ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর এই ছবি হয়ত কোনো ক্যামেরায় ধরা পড়েনি। কিন্তু আহত এবং মৃতদের পরিজনের বর্ননায় উঠে আসছে এমনই ছবি। বিপর্যয়ের মধ্যেও এমনই এক ছিনতাইয়ের চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছিল বলে অভিযোগ। একাধিক মৃত ও আহতদের পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, দুর্ঘটনার সময় তাঁদের নিকটজনদের মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনতাই করে নেওয়া হয়েছে। টাকা-পয়সা তো বটেই, খোয়া গিয়েছে সোনাদানা, মোবাইলও।
কমল কুমারের বছর উনিশের ছেলে বন্ধুদের সঙ্গে রেল লাইনের ধারে ওই দশেরার অনুষ্ঠান দেখতে গিয়েছিলেন। ফিরেছেন বন্ধুদের সঙ্গেই। তবে কাঁধে চড়ে, লাশ হয়ে। কিন্তু তাঁর দামি মোবাইলের কোনও হদিশ নেই, দাবি কমল কুমারের। সতেরো বছরের ছেলেকে হারিয়ে দিশাহারা জ্যোতি কুমারী। তাঁর অভিযোগ, ছেলে সবসময় গলায় সোনার চেন পরে থাকত। কিন্তু যখন মৃতদেহ সরকারি হাসপাতাল থেকে হস্তান্তর করা হয়, তখন চেন উধাও। জ্যোতি কুমারীর প্রশ্ন, ‘২০ হাজার টাকা দামের মোবাইল না হয় ছিটকে যেতে পারে, কিন্তু পকেটের মানিব্যাগ, সোনার চেন কোথায় গেল?’
আহতরাও ছাড় পাননি দুষ্টচক্রের হাত থেকে। ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে রাবণ পোড়ানো দেখতে গিয়েছিলেন দীপক নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি। মেয়ে ফেরেনি। বাবা-ছেলে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন হাসপাতালে। তার মধ্যেই হাসপাতালের বেডে শুয়ে দীপক জানালেন, ‘ট্রেনের ধাক্কায় নড়াচড়া তো দূর, সাহায্যের জন্য চিৎকারও করতে পারছিলাম না। তার মধ্যেই এক জন এসে পকেট হাতড়ে মোবাইল, টাকা-পয়সা যা ছিল, সব নিয়ে চলে গেল’।
এমন ঘটনার মধ্যেও যে মানুষ এমন নিষ্ঠুর হতে পারে বিশ্বাসই করতে পারছেন না মৃত ও আহতদের আত্মীয় পরিজনেরা। আবার দুর্ঘটনার পরও সেলফি, ভিডিয়ো তোলা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। এমনকী, রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরাও এই নিয়ে মুখ খুলেছেন। জম্মু কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা টুইটারে লিখেছেন, ‘কি ভয়ানক অমানবিক দৃশ্য! দুর্ঘটনার পরও লোকজন দাঁড়িয়ে ছবি, ভিডিয়ো, সেলফি তুলছেন’! প্রায় একই রকম টুইট করেছেন আম আদমি পার্টির নেত্রী প্রীতি শর্মা মেনন-ও।