বিসর্জন উপলক্ষ্যে টাকির ইছামতী নদী হয়ে উঠল দুই বাংলার মিলনমেলা। এবং ঠাসা ভিড়ে তা অনেকটা কার্নিভালের চেহারাই নিল। ওদিকে বাংলাদেশের পতাকা লাগানো নৌকো নদীর বুকে চক্কর মারছে সওয়ারিদের নিয়ে। আর এদিকেও ভারতীয় সীমানায় অসংখ্য নৌকো নেমেছে। এ যেন এক দেখার মত ব্যাপার।
ইছামতীতে বিসর্জন দেখতে টাকি ও বসিরহাটে এসেছিল লাখ লাখ মানুষ। তবে প্রতিবছরের মত এবারও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল যথেষ্ট কড়া। আগত দর্শনার্থী এবং বিদেশি পর্যটকদের যাতে কোনও রকমের অসুবিধা না হয়, সে ব্যাপারে পুলিশ, প্রশাসন, সীমান্তরক্ষী বাহিনী তাঁদের যথাযথ কর্তব্য পালন করে গেছে। পুর প্রশাসনও ছিল সজাগ।
এ বছর আগেভাগেই ঘোষণা করা হয়েছিল মাঝ নদী অতিক্রম করা যাবে না। সারাক্ষণই বিএসএফ এবং পুলিশ টহল দিয়েছে। ইছামতীর ওপ্রান্তে বাংলাদেশের দেভাটা থানার ঘলঘলে, শ্রীপুর, পারুলিয়া, ভাতশালা, সখিপুর, বসন্তপুর গ্রাম। সেইসব গ্রামগুলি থেকে আসা মানুষের ভিড় জমেছিল নদীর পাড়ে। টাকির বনেদি বাড়ি ও বারোয়ারি প্রতিমা নিয়ে নৌকো বিলাস দেখতে দেখতে মনে হয়েছে ঠিক যেন কার্নিভাল।
টাকির বিজয়ার উৎসবে এবারে এসেছিলেন বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, বসিরহাটের সাংসদ ইদ্রিশ আলি। ছিলেন টাকির পুরপ্রধান সোমনাথ মুখোপাধ্যায়। বিমান বাবু বলেন, ‘এখানকার বিজয়ায় দুই বাংলার মিলনের কথা অনেক শুনেছি। কিন্তু টাকিতে না এলে এত মানুষের আবেগ উপলব্ধি করতে পারতাম না। আজ এক বিরল অভিজ্ঞতার সাক্ষী হলাম।’
টাকির মতো দুই বাংলার মিলন দৃশ্য দেখা না গেলেও বসিরহাটে ইছামতীর বুকে বিজয়ার উৎসবও কোনও অংশে কম ছিল না। শহর, গ্রাম থেকে মানুষের ঢল নামে ইছামতীর পাড়ে। জামরুলতলা থেকে আশ্রমপাড়া পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ মানুষের জমায়েত দেখা যায়। আর নদীতে শহর ও আশপাশের গ্রাম থেকে আসা প্রতিমা নিয়ে শোভাযাত্রা।
এবারে বসিরহাটে বিজয়ার উৎসব উপলক্ষে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিল পুরসভা ও পুলিশ। ইছামতীর পাড় বরাবর ব্যারিকেড তৈরি করা হয়েছিল। নদীর ধারে সিসি ক্যামেরা, এলইডি আলোর ব্যবস্থা করেন বিধায়ক দীপেন্দু বিশ্বাস। তিনি ছাড়াও বসিরহাটের বিসর্জন পর্বে সারাক্ষণ ছিলেন পুরপ্রধান তপন সরকার সহ শহরের বিশিষ্ট মানুষজন।
অন্যদিকে, বিসর্জনে সম্প্রীতির আবাহনে সামিল হয়েছিল ২ জেলা পূর্ব বর্ধমান আর নদীয়া। ভাগীরথীর পূর্ব পাড়ে নদীয়ার বর্ধিষ্ণু জনপদ মাটিয়ারি আর পশ্চিম পাড়ে পূর্ব বর্ধমানের দাঁইহাট পুরসভা। দশমীর রাতে মাটিয়ারি ও লাগোয়া এলাকার পঞ্চাশের ওপর দুর্গাপ্রতিমা চাপানো হয় বড় বড় নৌকায়। আর আকারে ছোট নৌকোগুলি সেজে ওঠে আলোর মালায়।
তারপর ভাগীরথীর বুকের সেই শোভাযাত্রা এসে হাজির হয় দাঁইহাট পুরসভার ফেরিঘাটে। সেখানে তখন ৮ থেকে ৮০–র ঢল। নদীর বুকেই নৌকোর ওপর ঘণ্টা দুয়েক ধরে চলে আতশবাজির প্রদর্শনী। তার পর সেই বিশাল আলোকিত শোভাযাত্রা ফেরে মাটিয়ারি ঘাটে।
এছাড়া পুরুলিয়াতেও বিসর্জন নিয়ে যথেষ্ট উন্মাদনা দেখা গিয়েছে। দশমীর দুপুর থেকেই প্রতিমা নিয়ে বিসর্জনের পর্ব শুরু হয়ে গিয়েছিল। রীতিমতো শোভাযাত্রা করে পথে নেমেছিল পুজো কমিটিগুলি। বিসর্জনের পাশাপাশি এদিন বাংলা টিভি সিরিয়ালের অভিনেত্রীদের সঙ্গে সিঁদুর খেলায় মাতলেন পুরুলিয়ার ভামুরিয়ার বাথানেশ্বর এলাকায় গ্রামের মহিলারা। সব মিলিয়ে গোটা দক্ষিণ বাংলা জুড়েই কার্নিভালের চেহারা নিয়েছিল বিসর্জন।