পুজো মানে এখন আর পঞ্চমী-দশমী নয়। বিজয়া হয়ে গেলেও তাই শারদোৎসব শেষ হয়নি রাজ্যে। ইতিমধ্যেই দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রা ঘিরে রেড রোডে কার্নিভালের জন্য জোরকদমে প্রস্তুতি চলছে।
বছর দুয়েক আগে থেকে রেড রোডে দুর্গাপুজো কার্নিভাল শুরু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। যা কম আকর্ষণীয় নয়। শুধু বর্ণাঢ্য বললে কম বলা হয়, এই অনুষ্ঠান যেন এক দিগন্তের দিকে সুদীর্ঘ যাত্রা। যে দিগন্তযাত্রায় উঠে আসে ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, সম্প্রীতির বিভিন্ন রং। সব রং মিশে তৈরি হয় এক আলোকিত বর্ণমালা। বছর বছর এই উৎসব দেখার আগ্রহ ক্রমশ বাড়ছে। ফি বছর সেই উন্মাদনা তুঙ্গে।
মুম্বইয়ের গণপতি উৎসবের বিসর্জনের মতো কল্লোলিনী কলকাতার সেরা প্রতিমার বিসর্জনের জন্য এই কার্নিভালের ভাবনা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ২০১৬ সালে সেরা ৩০টি প্রতিমা এই কার্নিভালে অংশ নিয়েছিল। ২০১৭ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৬টিতে। আর এবার ৭৫টি পুজো স্থান পেয়েছে।
কার্নিভাল দেখতে আসার জন্য দর্শকদের অবাধ প্রবেশের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু সামনে থেকে আসনে বসে কার্নিভাল উপভোগ করার মজাই আলাদা। স্বভাবতই আসনে বসার ছাড়পত্র পেতে মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ। তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর এবং পর্যটন দপ্তরে ভিড় তো রয়েইছে, তেমনই মন্ত্রীদের কাছেও অনুরোধের পাহাড় জমেছে।
কলকাতায় অবস্থিত বিভিন্ন দেশের দূতাবাস থেকেও পর্যটন দপ্তরের কাছে কার্নিভাল দেখার ছাড়পত্র চেয়ে অনুরোধ এসেছে বিস্তর। সৌজন্যে লন্ডনে টেমস উৎসব। এই উৎসবে তুলে ধরা হয়েছিল বাংলার শারদোৎসবকে। তারপর থেকেই বিদেশি পর্যটকদের মধ্যে বাংলায় এসে পুজো দেখার আগ্রহ বেড়েছে।
পর্যটন দপ্তর থেকে এ বছরই প্রথম ‘এগজিকিউটিভ ক্লাস’–এর জন্য ঠাকুর দেখা, অভিজাত রেস্তোরাঁয় খাওয়া, বনেদি বাড়ির পুজো উপভোগ করার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আর এই প্যাকেজের সঙ্গেই রয়েছে কার্নিভাল দেখার বিশেষ ছাড়পত্র। বিশেষত কার্নিভালে শহরের সেরা পুজোগুলির প্রদর্শনী একসঙ্গে দেখতে অসংখ্য বিদেশি পর্যটক আসেন এ রাজ্যে।
এবার রেড রোডের দুপাশে ২০ হাজার দর্শকের বসার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বিদেশি পর্যটকদের জন্য দেড় হাজার আসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৭০ থেকে ৭২টি পুজো কমিটি অংশগ্রহণ করতে চলেছে রেড রোডের এই অনুষ্ঠানে। গত বছর অংশ নিয়েছিল ৫২টি কমিটি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অতিথিদের সামনে দেড় মিনিট করে প্রদর্শনীর সুযোগ পাবে প্রতিটি পুজো কমিটি।
রাজবাড়ির অলিন্দের আদলে তৈরি হয়েছে মূলমঞ্চ। ৮০ থেকে ৯০ জন মঞ্চে বসে কার্নিভাল দেখতে পারবেন। এই মঞ্চেই বসবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা–সহ মন্ত্রিসভার বাকি সদস্যরা। এই মঞ্চের পাশে ভিআইপিদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে। রেড রোডের দু’ধারে ভিভিআইপি মঞ্চের পাশে এই বিশেষ অতিথিদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুরো রেড রোড আলোকসজ্জায় সাজিয়ে তোলা হয়েছে।
রেড রোডের বেশ কিছু জায়গায় থাকবে জায়ান্ট স্ক্রিন। কার্নিভালে অংশগ্রহণকারী পুজো কমিটির সংখ্যা যত বাড়ছে, প্রদর্শনীর জন্য সময়ও কম পাচ্ছে কমিটিগুলি। তবুও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই শিল্পীর সৃষ্টিকে তুলে ধরতে সচেষ্ট ক্লাবগুলি। যাতে বাড়িতে বসেও দর্শকরা কার্নিভাল দেখতে পান, তার জন্য সরাসরি টিভিতেও সম্প্রচার করা হবে।
পুজোর পরে এ যেন এক ‘অন্য’ পুজো। যেখানে নাচে, গানে, বন্দনায় মুখর হয় ইতিহাসের রেড রোড। আশ্বিনের সন্ধ্যায় মুখর হয় মহানগর।