পুজো মানেই পঞ্চমী থেকে দশমী, এ ধারণা এখন অতীত। গত কয়েক বছর ধরে চতুর্থী থেকেই শুরু হয়ে যায় ঠাকুর দেখার হিড়িক। রাস্তায় নামে মানুষের ঢল। যা চলে পুজো কার্নিভাল অবধি। শনিবার একাদশীর রাতেও মণ্ডপে মণ্ডপে দর্শনার্থীদের ভিড় দেখে কে বলবে পুজো শেষ হয়ে গিয়েছে?
পুজোর ক’দিন আবহাওয়া ছিল মোটের ওপর আরমাদায়ক। ঝড়-জলের আশঙ্কা ছিল না। তাই উৎসবের আবহ যেন হয়ে উঠেছিল আরও মধুর। তাই রাত যত বেড়েছে, পাল্লা দিয়ে ভিড়ও বেড়েছে। বিরামহীনভাবে দর্শনার্থীরা পৌঁছে গেছেন শহরের এ–প্রান্ত থেকে ও–প্রান্তে। তাঁদের উৎসাহে কোনও খামতি নেই।
ফলে পুজোর দিনগুলিতে যেন আনন্দতরীতে সওয়ার হয়েছিল গোটা বাংলা। সপ্তমী থেকে নবমী মণ্ডপগুলিতে ভিড় করেছিল আট থেকে আশি। আলো, আনন্দের জোয়ারে ভাসছিল কলকাতা।
সপ্তমীর রাতে ভিড়ের চাপে টালাপার্ক প্রত্যয়ের মণ্ডপ কয়েক ঘণ্টার জন্য বন্ধ করে দিতে হয়। তবে পুলিশ–প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ায় পরদিন, অষ্টমীতে মণ্ডপ খুলে দেওয়া হয়। ভিড় সামলাতে ত্রিধারা সম্মিলনীর প্রতিমার বেদি কিছুটা ছোট করে দেওয়া হয়। সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যারের রুপোর রথও তুমুল জনপ্রিয় হয়েছে।
বাগবাজার সার্বজনীন, কুমোরটুলি পার্ক সার্বজনীন, ম্যাডক্স স্কোয়্যার, সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যার, টালাপার্ক প্রত্যয়, একডালিয়া এভারগ্রিন, চেতলা অগ্রণী, সুরুচি সঙ্ঘ, নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘ, আহিরীটোলা সার্বজনীন, কলেজ স্কোয়্যার, মহম্মদ আলি পার্ক, ত্রিধারা সম্মিলনী, শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাব, কাশী বোস লেন, বেহালা নতুন দল, হিন্দুস্থান পার্ক সার্বজনীন, কালীঘাট মিলন সঙ্ঘ, বাদামতলা আষাঢ় সঙ্ঘ, অজেয় সংহতি, মুদিয়ালি, তেলেঙ্গাবাগান, বোসপুকুর শীতলা মন্দিরের পুজোয় ভিড় ছিল যথারীতি।
মহানগরীর উত্তর থেকে দক্ষিণ ভাগ সব জায়গায় উৎসবের এমনই ঝলমলে ছবি। দশমীতে দেবীবরণ, সিঁদুরখেলা, মিষ্টিমুখ, বিসর্জন। তবে ওই দিনও কলকাতার বিভিন্ন পুজোমণ্ডপে ভিড় দেখা গিয়েছিল। এমনকি শনিবার একাদশীতেও অনেকে বেড়িয়ে পড়েছিলেন ঠাকুর দেখতে। উৎসব যেন শেষ হয়নি এখনও।
দশমীতে অনেক প্রতিমাই বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। বেশির ভাগই বাড়ির পুজো। একাদশীর দিন অনেক বারোয়ারি পুজোর প্রতিমাও বিসর্জন হয়ে গিয়েছে। বিসর্জনের তদারকিতে ছিলেন কলকাতার মহানাগরিক শোভন চট্টোপাধ্যায়, নগরপাল রাজীব কুমার। তবে পুজো কার্নিভাল থাকায় এখনও শহরের বড় বড় পুজোগুলির প্রতিমা বিসর্জন হয়নি। তাঁদের মন্ডপ ও প্রতিমা উভয়ই এখনও বহাল তবিয়তে। ফলে একাদশীর দিনও উপচে পড়েছে ভিড়। ২৩ তারিখ কার্নিভাল না হওয়া অবধি শহরের পথেঘাটে মানুষের ঢল থাকবে, এমনটাই মনে করছে প্রশাসন।