উত্তর ও পশ্চিম ভারত দিয়ে শুরু, তারপর একের পর এক রাজ্যে বিজেপির সাম্প্রদায়িক রথ এগিয়েছে। সাম্প্রদায়িক বিষ পান করে বড় অংশের মানুষ উন্নয়ন, দৈনন্দিন সমস্যা, কর্ম সংস্থান, শান্তি-সম্প্রীতি – সব ভুলে বিজেপিকে ভোট দিয়ে ভারতের মাটিতে কালো দিন ডেকে এনেছে। বিজেপিকে ভোট দেওয়া আসলে নিজের গলায় ফাঁস লাগানো, তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে আপামর ভারতবাসী। তবে সাম্প্রদায়িক বিজেপির পথে প্রতিরোধের প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বাংলা ও দক্ষিণ ভারত। বাংলার মাটি, সাম্প্রদায়িক শক্তির জন্য বড়ই রুক্ষ। বাংলার পরম্পরা, বাংলার ঐতিহ্য বারবার থাপ্পড় কষাচ্ছে সাম্প্রদায়িক শক্তির গালে।
সারা দেশে অবস্থা বেগতিক, মোহভঙ্গ হয়েছে ইতিমধ্যেই। তাই বাংলার উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইছে বিজেপি। ৪২ টা লোকসভা সিট রাজ্যে, শকুনের চোখ ঘুরপাক খাচ্ছে। দেশভাগ, বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন, এন আর সি- সব কিছুকেই অস্ত্র করে খেলতে চাইছে বিজেপি। বাংলার নানা প্রান্তে নানা কায়দায় দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা চলছে। দু একটা জায়গায় সাময়িক ভাবে সফল হলেও, বিজেপির পরিকল্পনা বানচাল করে দিয়েছে বাংলার মানুষ। বাংলায় কোটি কোটি কালো টাকা ঢুকছে দাঙ্গা লাগাতে ও বাংলার সরকারকে প্রতি মুহূর্তে বিপদে ফেলতে। কিন্তু তারপরও, বিজেপির ভিত মজবুত হয়নি বাংলার মাটিতে, হওয়া সম্ভবও না।
হিন্দুদের মধ্যে মুসলমান বিদ্বেষ ও ভয় সৃষ্টি করে ভোটে জেতার স্বপ্ন ছিল। বাংলায় ৭০% হিন্দু, ২৭% মুসলমান। তাই ৭০% র একটা বড় অংশকে সহজেই সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বোড়ে বানানো যাবে, দিবাস্বপ্নে মশগুল ছিল বিজেপি। কিন্তু ২০১৪ র পর থেকে বিজেপির প্রেমে পড়া অনেক মানুষের কাছে এখন যেন বিচ্ছেদের সময়। তাই মাথার ঠিক নেই বিজেপির। বিজেপি নেতারা নতুন ফন্দি আঁটছে, এবার তাদের অস্ত্র মুসলমান সাম্প্রদায়িকরা। বিজেপি জানে, ২৭% শতাংশ মুসলমানের ১% এরও ভোট পাবে না তারা। তাই মুসলিম ভোট যাতে একদিকে না যায় গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। এবং সাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে সুবিধে করতে মুসলমান সাম্প্রদায়িকদের দিয়ে হিন্দু বিদ্বেষ ছড়ানোর চেষ্টা চলছে, যাতে হিন্দুরা বিপদ ভেবে একদিকে হয়। বাংলার মানুষের কাছে নতুন চ্যালেঞ্জ বিজেপির এজেন্ট এই মুসলমান সাম্প্রদায়িকরা। তারা ইদানীং সক্রিয় হয়েছে। বাংলার মুসলমান সমাজকে শত্রু চিনতে হবে। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ইমাম ভাতার দাবিতে মিছিল, আসলে যে এই খেলার অংশ সেটা বোঝা জরুরি। কারণ এই মিছিল মুসলমানদের ক্ষতি করেছে, একমাত্র লাভ হয়েছে বিজেপির। নিকট ভবিষ্যতে হিন্দুদের উত্যক্ত করতে নানা কৌশলে ময়দানে নামবে এই মুসলমান সাম্প্রদায়িকরা। আগামী কয়েক মাসে মুসলিম ভোট কাটতে নতুন মুসলিম দলের জন্ম হলে অবাক হব না। ইতিমধ্যেই বিজেপির বিপদের বন্ধু আসাউদ্দিন ওয়েসি বাংলার মাটিতে আনাগোনা শুরু করেছে। তার জীবনে একমাত্র কাজ মুসলিম রাজনীতি করে মুসলিম ভোট কাটা এবং হিন্দু ভোটকে ঐক্যবদ্ধ করা। মৌলবাদ একে অপরের বন্ধু হয়, একজন বাড়লে অন্যজনের বাড়ার ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়। সাম্প্রদায়িক জমি তৈরি হলে ফসল তোলে দু পক্ষই। এতে মানুষের ক্ষতি হয়। ক্ষতি হয় সমাজের। হিন্দু-মুসলমান ঐক্যের ভিত্তিতে চিড় ধরলে তা ভয়ঙ্কর হবে, বিপদ বাড়বে সাধারণ মানুষের। আর সেই ভাগাড়ে সানন্দে আহার সারবে এই শকুনের দল।
তাই সময় এসেছে, সতর্ক হতে হবে। প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে বাঙালি হিসাবে, মানুষ হিসাবে। হিন্দু বা মুসলমান যেকোনও সাম্প্রদায়িক শক্তিকে ছুঁড়ে ফেলতে হবে। মুসলমান নেতা মানেই মুসলমানের বন্ধু, এটা পাগলের প্রলাপ মাত্র। কারণ ইতিহাস বলে সাধারণ মানুষের মাথায় বেল ভেঙে খেয়েছে অনেকেই। তাই বাংলার হিন্দু ও মুসলমান সকলকে বন্ধু বাছতে হবে, শত্রু চিনতে হবে। নাহলে, ভয়াবহ ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে। আশাকরি বাংলার মানুষ আবারও সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে আস্তাকুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলবে।
( মতামত লেখকের ব্যক্তিগত )